বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের জীবন নানা ঘটনায় বর্ণিল। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে যে কয়েকজন ছাত্র ফজলুল হক মুসলিম হলের পুকুরপাড়ে বসে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার পক্ষে বৈঠক করেছিলেন, তিনি ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন। খুবই মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ১৯৫১-৫২ শিক্ষাবর্ষে তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র সংসদের সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাঁর বন্ধু জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী হয়েছিলেন সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু মুসলিম লীগ ও আওয়ামী মুসলিম লীগের সমর্থক ছাত্ররা এক জোট হয়ে যাওয়ায় নির্বাচিত সংসদের বাজেট পাস হয়নি। ফলে বিধান অনুযায়ী তাঁদের পদত্যাগ করতে হয়েছিল।
২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে যে ১০ জনের মিছিল বের হয়েছিল, তার প্রথমটিতে ছিলেন তিনি। গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ছাড়া পেয়েছিলেন সে বছর ১১ মার্চ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর নিয়োগ বাতিল হয়ে গিয়েছিল রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে কারাবাসের দায়ে। এরপর তিনি হয়েছিলেন মর্নিং নিউজ পত্রিকার খবর। সে খবরে দেখা গেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহদ্বারে বুকে ট্রে ঝুলিয়ে সিগারেট বিক্রি করছেন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। সেই চলমান দোকানের নাম দিয়েছিলেন ‘শেলীজ ঔন শপ’। তাঁর ডাক নাম ছিল শেলী।
যখন তিনি জগন্নাথ কলেজে শিক্ষকতা করছেন, তখন একদিন দেখা গেল নিখুঁত স্যুট-টাই পরে তিনি রায়সাহেব বাজারের দিক থেকে কলেজের দিকে যাচ্ছেন। হাতে তাঁর একটি নারকেলের হুঁকো।
আনিসুজ্জামান সবিনয়ে জানতে চাইলেন, ‘হাতে হুঁকো কেন?’
উত্তরে তিনি বললেন, ‘কামরুজ্জামান সাহেবের পাইপের জবাব।’
ঘটনা হলো, জগন্নাথ কলেজের গণিতের শিক্ষক কিউ কিউ জামান সাদা খদ্দরের পাঞ্জাবি-পায়জামা-টুপি পরতেন, কিন্তু ভালো তামাক খেতেন পাইপে। তাই স্যুট পরা হাবিবুর রহমান শেলী নারকেলের হুঁকো খেয়ে তার জবাব দিচ্ছিলেন।
সূত্র: আনিসুজ্জামান স্মরণ ও বরণ, পৃষ্ঠা ৮৭-৮৮