হোম > মতামত > সম্পাদকীয়

ঘাতক নৌযান

সম্পাদকীয়

সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দেশে নিত্যদিনের ঘটনা। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। নিরাপদ সড়কের দাবি জোরালো হলেও সড়ক দুর্ঘটনা কমছে না। কারণে-অকারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়কে মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। ইদানীং সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নৌপথের দুর্ঘটনা। লাইসেন্স ছাড়া কিংবা অবৈধ উপায়ে নৌযানে যাত্রী ও মালামাল বহনে নিয়োজিত লঞ্চ, কার্গো ও স্পিডবোট নিয়মিত ব্যবধানে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে, আর কেড়ে নিচ্ছে শত শত মানুষের প্রাণ। ৩ মে সোমবার সকালে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি এলাকায় একটি স্পিডবোট দুর্ঘটনায় অন্তত ২৭ জন মানুষের জীবন গেছে।

লকডাউনের কারণে নৌপথে যান চলাচল বন্ধ থাকলেও অবৈধভাবে যাত্রী পারাপার করছিল একটি স্পিডবোট। বোটটি মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে ৩২ জন যাত্রী নিয়ে বাংলাবাজার ঘাটের দিকে যাচ্ছিল। যাত্রীদের বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও স্পিডবোটের চালক বেপরোয়া গতিতে কাঁঠালবাড়ি এলাকায় পৌঁছে নদীর তীরে নোঙর করা একটি বালু বোঝাই নৌযানকে (বাল্কহেড) ধাক্কা দিলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এলাকার লোকজন চেষ্টা করে সামান্য কয়েকজন যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করতে পারলেও বেশির ভাগেরই মৃত্যু হয়। জানা গেছে, দুর্ঘটনায় পড়া স্পিডবোটটির কোনো অনুমোদন ছিল না।

অনুমোদনহীন একটি নৌযান করোনাকালের নিষেধাজ্ঞা অমান্য বা উপেক্ষা করে কীভাবে যাত্রী পারাপার করছিল, তার কোনো সদুত্তর হয়তো পাওয়া যাবে না। কিন্তু বিষয়টি যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অজ্ঞাতে ঘটেছে, তেমন মনে করার কারণ নেই। নৌ-পুলিশ, বাংলাদেশ অভ্যন্তীরণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষসহ সবাই এটা জানে। কিন্তু বাধা দেওয়া হয় না বিশেষ লেনদেনের সম্পর্কের কারণে। বেশি যাত্রী এবং বেশি ভাড়া আদায় করে তার একটি ভাগ ‘কর্তৃপক্ষ’কে নজরানা হিসেবে দিয়েই এই অবৈধ পারাপার চলে। অসাধু সরকারি কর্মকর্তা এবং সরকারি দলের স্থানীয় নেতাদের পারস্পরিক যোগসাজশে এই নৌযানগুলো চলাচল করে। এর কোনোটি যখন ঘাতকের ভূমিকায় নামে, তখন এ নিয়ে একটু নড়াচড়া হয়; তারপর তদারকি যথানিয়মে বন্ধ থাকে এবং নৌযান দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হতে থাকে।

গত ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে বেপরোয়া কার্গোর ধাক্কায় একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে যাওয়ায় অনেকের মৃত্যু হয়েছিল। ওই কার্গোটিরও কোনো অনুমোদন ছিল না। এসব অনুমোদনহীন নৌযান কীভাবে দিনের পর দিন চলাচল করে তার জবাব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দিতেই হবে। ঘাট এবং স্পিডবোট নিয়ন্ত্রণকারী আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। যাঁরা অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করেন, দুর্ঘটনার দায় তাঁদের ওপর অবশ্যই চাপাতে হবে। লাভের ভাগ নেবেন, কিন্তু মানুষের জীবনের নিরাপত্তার দায় নেবেন না—তা হতে পারে না।

২০১৮ সাল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সোয়া ৩ বছরে দেশে ছোটবড় মিলিয়ে মোট ৬০১টি নৌদুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৭৭৩ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এভাবে মানুষ হত্যা বন্ধ করার জন্য ঘাতকদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।

সংযোগ সড়কহীন সেতু

যা করণীয়

নিরাপত্তাহীনতা

আজ বিজয়ের দিন

রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারণা

গুলিবিদ্ধ হাদি ও নির্বাচন

নির্বাচনের পথে দেশ

কেন থমকে যাচ্ছে মেট্রোরেল

স্পর্ধা

মোহাম্মদপুরে জোড়া খুন