একটা সময় চলচ্চিত্রের চাপে পড়ে কলকাতার মঞ্চনাটকও দর্শক হারাচ্ছিল। বলা হয়ে থাকে, শম্ভু মিত্র তখন নাট্য প্রযোজনার বাঁক পরিবর্তন করছেন। একসময় মঞ্চের রুচি পাল্টে দিয়েছিলেন শিশির ভাদুড়ী, সেটা আরও পাল্টে দিলেন নবনাট্যের শম্ভু মিত্র। দুজনের উপস্থিতিতে নাটক নিয়ে একটা বাহাস হবে, ভাবছিলেন দর্শকেরা।
শিশির ভাদুড়ী যে উপস্থিত থাকছেন আলোচনা সভায়, সেটা আগে থেকে শম্ভু মিত্রকে কেউ বলেনি। মিলনায়তন ভরা দর্শক। তাঁরা অপেক্ষা করছেন, মঞ্চনাটকের দুই প্রজন্মের দুই দিকপাল নাটক নিয়ে কী বলেন, তা শুনতে। মঞ্চের তিনটি চেয়ারের দুটিতে বসেছেন শিশির ভাদুড়ী আর শশীভূষণ দাশগুপ্ত।
শম্ভু মিত্রের পৌঁছাতে একটু দেরি হবে, জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শিশির ভাদুড়ী তখন বলছিলেন নাটক নিয়ে কথা। রঙমহল বা স্টারে চলছে শিশির ভাদুড়ীর নাটক, কিন্তু প্রতিদিনই কমছে দর্শক, এ কথা বলে আক্ষেপ করলেন তিনি। সমবেত দর্শক-শ্রোতার কাছে জানতে চাইলেন শিশির ভাদুড়ী, তাঁরা কি নাটক ভালোবাসেন, নাটকের বই পড়েন, থিয়েটার দেখতে যান? তাহলে থিয়েটার হলগুলো ফাঁকা পড়ে থাকে কেন?
এ রকম সময় শম্ভু মিত্র এলেন। মঞ্চে শিশির ভাদুড়ীকে দেখে অবাক হলেন তিনি।
শিশির ভাদুড়ী বলে চলেছেন, মাত্র এক টাকা নাটকের টিকিট। কিন্তু কেউ কেন কেনে না। ওদিকে ঘরের পাশের সিনেমা হলে হিন্দি ফিল্ম চলছে, তাতে লোকের ভিড়। কী যেন ফিল্মটার নাম…
নাম ভুলে যাওয়ার ভান করেন শিশির ভাদুড়ী। মিলনায়তন থেকে সমস্বরে রোল ওঠে, ‘আনারকলি’!
জবাব শুনে ডান হাত সামনে যতটুকু প্রসারিত করা যায়, ততটুকু প্রসারিত করে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, আনারকলি…’
এ কথা বলে তিনি দর্শকদের সেই মেসেজটাই দিয়ে দেন, যা নিয়ে বলছিলেন কথা! শম্ভু মিত্র সেদিন কেন কথা বলেননি, সে এক অন্য প্রসঙ্গ।
সূত্র: শঙ্খ ঘোষের গদ্যসংগ্রহ, ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩০৯-৩১০