হোম > মতামত > সম্পাদকীয়

মানুষ বাঁচানোর নায়ক এবং…

সম্পাদকীয়

পি কে হালদারের ব্যাংকের টাকা চুরির খবর নিশ্চয়ই এখনো কেউ ভুলে যায়নি। বেসিক, সোনালী, জনতা, ফারমার্স (পদ্মা) ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নেওয়ার ঘটনাও হয়তো সবার মনে ভাসছে! জনগণের আমানতের টাকা চুরি করে একশ্রেণির দলবাজ, দুর্নীতিবাজ, সুবিধাবাদী গোষ্ঠী আইনের চোখে ধুলো দিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ পাঁচ তারকা হোটেলে মৌজ-মাস্তি আর পার্টি করছেন। কেউবা আবার দুবাইয়ে বিলাসবহুল হেরেম বানিয়ে সুইমিংপুলের পানিতে পা ভেজাচ্ছেন! তাঁদের কাউকে আবার দেখা যায় কানাডা, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানিয়ে আয়েশে জীবন কাটাতে। রাজনীতিকে টাকা বানানোর নেশায় পরিণত করে কারও কারও কলাগাছ হয়ে যাওয়া আর সমাজকে নৈরাজ্য ও পেশির দৌরাত্ম্যে সাধারণের ঘুম হারাম করার ঘটনা তো নিত্যসঙ্গী।

এসব চোর, ডাকাত, লুটেরার মুখোশগুলো যখন সবার মনের মধ্যে নিত্য খেলা করে, তখনই আজকের পত্রিকার প্রথম পাতার বাঁ পাশে ওপরের এক কলামে চোখ আটকে যায় একটি খবরে! ছোট্ট একটি খবর; অথচ, আহা…কত না আশাজাগানিয়া! খবরটি হলো, জয়পুরহাটের পাঁচবিবির কোকতারায় গত শুক্রবার সকালে ‘পঞ্চগড় এক্সপ্রেস’ নামের একটি ট্রেন ঢাকা থেকে দ্রুতবেগে পঞ্চগড়ের দিকে ছুটে যায়। কিন্তু রেললাইনের একটা অংশ ভাঙা। এটা স্থানীয় বাসিন্দা দিনমজুর নাজির আকন্দের নজরে পড়ে। তিনি কাঁধের লাল গামছা উঁচিয়ে সতর্ক করতে চাইছেন ট্রেনের চালককে। কিন্তু ট্রেনের গতি কমছে না। তখন আশপাশ থেকে আরও কয়েকজন এগিয়ে এসে রেললাইনের ওপরে দাঁড়িয়ে গামছাটি আড়াআড়িভাবে মেলে ধরেন। এবার নজর পড়ে চালকের, তিনি গতি কমিয়ে ট্রেনটি থামান। এতে এড়ানো যায় বড় দুর্ঘটনা। রক্ষা পায় ট্রেনের কয়েক শ যাত্রী।

দিনমজুর নাজির প্রতিদিনের মতো ওই দিনও অন্যের বাড়িতে কাজের খোঁজে বের হন। রেললাইন দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দেখেন দুটি পাতের মাঝে প্রায় আট ইঞ্চি পরিমাণ অংশ ভাঙা। এটা দেখেই তিনি ভাবেন ট্রেন থামাতে না পারলে বড় দুর্ঘটনা হবে। তাই চিৎকার করতে করতে কাঁধের লাল গামছাটি উঁচু করে মেলে ধরেন। ট্রেন থামান। রক্ষা পায় জানমাল।

ছোট্ট এ ঘটনাটি কত কিছুর কথা বলে! দিনমজুর নাজির আকন্দ। যাঁর একবেলা খাবার জোটে তো অন্য বেলার খবর নেই। অথচ তাঁর মনের ভেতরটি যেন পাহাড় কিংবা সাগরের মতো বিশাল আর মায়ায় ভরা! সম্বল গায়ে জড়ানো এক টুকরো লাল কাপড়। মানুষের জীবন বাঁচাতে একমুহূর্তও ভাবলেন না কী আছে আর নেই। অথচ আমাদের সমাজে শিক্ষিত, ধনী, প্রভাবশালী কত ধরনের মানুষ প্রতিদিন মানুষ ঠকাচ্ছেন। একে অন্যের টাকা, সম্পদ লুটে নিয়ে বড়লোক হচ্ছেন। কে কার আগে কাকে ফেলে দিয়ে সামনে এগিয়ে যাবেন, চলে এই প্রতিযোগিতা। স্বার্থের জন্য খুন, মারামারি তো মামুলি ব্যাপার।

যাঁরা সমাজটাকে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট আর মানুষ ঠকানোর রাজ্য বানাতে চান, তাঁরা কী একটুও বিবেকবান, সৎ, সংবেদনশীল হতে পারেন না? তাঁরা কী অভাবে ক্লিষ্ট নাজির আকন্দের মতো মনের মধ্যে এক-আধটু মায়ার চাষ করতে পারেন না? তাহলে তো দেশটা সত্যিই আরও সুন্দর হতো।

শান্ত হোন

সংযোগ সড়কহীন সেতু

যা করণীয়

নিরাপত্তাহীনতা

আজ বিজয়ের দিন

রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারণা

গুলিবিদ্ধ হাদি ও নির্বাচন

নির্বাচনের পথে দেশ

কেন থমকে যাচ্ছে মেট্রোরেল

স্পর্ধা