করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেম। তারা প্রণোদনার ঋণ নিয়ে একটি জরিপের ফল প্রকাশ করেছে ২৮ আগস্ট। তাতে দেখা যায়, করোনার ক্ষতি কাটাতে সরকারের দেওয়া প্রণোদনার ঋণ পেতে ২৯ শতাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছে ঘুষ চাওয়া হয়েছে। এই ঘুষ দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা। সানেমের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে। খবরটি গতকাল বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।
গবেষণা সংস্থাটির জরিপে উৎপাদন ও সেবা খাতের ৫০১ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা কিংবা তাঁদের প্রতিনিধির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। ২৯ শতাংশ তাঁদের কাছে ব্যাংকারদের ঘুষ চাওয়ার কথা জানালেও ৪৭ শতাংশ এ বিষয়ে নীরব ছিলেন। সানেম ধারণা করছে, যাঁরা নীরব ছিলেন, তাঁদের কাছেও ঘুষ চাওয়া হয়ে থাকতে পারে।
খবরটি খুবই হতাশাজনক। যেখানে করোনার মতো একটি বৈশ্বিক মরণব্যাধির সঙ্গে সারা পৃথিবী কঠিন সংগ্রাম করছে, জীবন ও জীবিকা বাঁচাতে সরকারি ও বেসরকারি খাত মরণপণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, সেখানে এই খবর কোনোভাবেই মানা যায় না। সরকার করোনার প্রথম ধাক্কা আসার পরই বিভিন্ন খাতে আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করে। প্রণোদনার অর্থ সরকার ও ব্যাংকের যৌথ তহবিল থেকে দেওয়ার কথা বলা হয়। যেহেতু ব্যাংকই পুরো প্রণোদনার টাকা ঋণ আকারে বিতরণ করছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংক এখানে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও সুবিধাভোগীরা তাঁদের ঋণ পাওয়ার যাবতীয় নথিপত্রসহ যোগাযোগ করে ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করবেন—এটাই স্বাভাবিক। যাঁদের শর্ত পূরণ হবে না, তাঁরা ঋণ পাবেন না, এটাও সত্য।
তবে প্রণোদনার টাকা দিতে সুবিধাভোগীদের কাছে ব্যাংকারদের ঘুষ চাওয়ার ঘটনা পুরো প্রণোদনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সরকারের সদিচ্ছাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। ব্যাংকে ঋণ পেতে ঘুষ দিতে হয়—এ কথা কমবেশি প্রচলিত আছে। সম্প্রতি জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. জামালউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারেও ব্যাংকে ঘুষ ছাড়া কিছু হয় না বলে জানিয়েছিলেন। তবে আমরা মনে করি, ঢালাওভাবে হয়তো এ কথা সত্যি নয়। সব ব্যাংকার নিশ্চয়ই ঘুষ চান না। হয়তো কেউ কেউ চান। কিন্তু জরিপের ফলাফলের মধ্য দিয়েও একটা ধারণা জন্মেছে যে কোনো কোনো ব্যাংকার তাঁদের গ্রাহকদের সুবিধা দিতে ঘুষ চেয়েছেন। ঘুষ-দুর্নীতি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আর করোনার মতো একটি কঠিন সংগ্রাম মোকাবিলার সময় তো নয়ই।
আমরা মনে করি, এর সঠিক তদন্ত হওয়া দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করতে পারে। এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে ব্যাংকের মতো জরুরি একটি খাতের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা বাড়বে। দেশ ক্রমে এগিয়ে যাওয়ায় একটি অপরিহার্য খাতের এমন ভঙ্গুর দশাকে সামনে নিয়ে আসবে। ব্যাংকিং খাতের সুশাসন নিয়ে যে এত দিনের সমালোচনা, এটা আরও পাকাপোক্ত হবে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।