হোম > মতামত

নতুন বেহালা

সম্পাদকীয়

সরকারি কাজে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক গিয়েছিলেন দুর্গাপুরে। সেখানে শুনেছেন বাউল আরজ আলীর গান। তাঁর অসাধারণ কণ্ঠ-মূর্ছনায় মুগ্ধ হয়ে নতুন একটি বেহালা উপহার দিয়েছেন তিনি। খবরটা খুব ছোট। কিন্তু এর তাৎপর্য বিশাল। দিনে দিনে আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধের মূল অর্জনগুলো হারিয়ে ফেলছি, ধর্মব্যবসা, রাজনীতিতে পেশিশক্তি আর দুর্নীতির সহাবস্থান, সংস্কৃতির নামে শিকড়-ওপড়ানো অসংস্কৃতির জয়গান, ব্যবসার নামে সাধারণ শ্রমিকদের শোষণ যখন নিত্যকার ঘটনায় পরিণত হচ্ছে, তখন এ রকম একটি সংবাদ মনে আনন্দ আনে। এই তো অল্প কয়েক দিন আগে গান গাওয়ার অভিযোগে এক তরুণের চুল কেটে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছিল। বগুড়ার শিবগঞ্জে বাউল দলের সঙ্গে গান গাওয়ার কারণে মেহেদী হাসান নামের সেই তরুণকে যে মাতব্বররা ন্যাড়া করে দিয়েছিলেন, তাঁরা গ্রামে প্রভাবশালী। গান যে তাঁদের গাত্রদাহের কারণ হয়ে উঠতে পারে, সে কথা কে জানত?

প্রসঙ্গটা আনতে হলো এ কারণে যে, দেশের সর্বত্রই স্বাধীনভাবে সংস্কৃতিচর্চার ওপর পরোক্ষভাবে নিষেধাজ্ঞা আসছে। গ্রামে-শহরে-বন্দরে একশ্রেণির প্রভাবশালী মানুষ এই অনাচার শুরু করেছে। দেশের লোকজ সংস্কৃতি দুভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছে। একটি হলো, অন্য সংস্কৃতির ভয়াবহ থাবা, আরেকটি হলো ধর্মব্যবসায়ীদের ক্রমাগত লোকজ সংস্কৃতিবিরোধী অবস্থান। এই দুই দুর্বৃত্তের কর্মকাণ্ডে রাশ টেনে ধরা কঠিন দুটো ভিন্ন কারণে। প্রথমটির সঙ্গে বৃহৎ পুঁজির স্বার্থ এবং দ্বিতীয়টির সঙ্গে স্পর্শকাতর ধর্মকে ব্যবহারের সুযোগ থাকায় সাধারণ মানুষ তা থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজে পায় না।

সরকার নিজ সংস্কৃতিকে গৌরবের আসনে বসাতে চাইলে সর্বস্তরে সংস্কৃতিচর্চার দ্বার অবারিত করে দেওয়ার ক্ষেত্রে রাখতে হবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সরকারকে এ কাজগুলো করতে হয় তার বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। সেখানে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন, তাঁরা কি নিজ সংস্কৃতি প্রসারের মতো করে মন গড়ে নিতে পেরেছেন?

মাঝে মাঝে আমরা দেখি, পার্কে গিয়ে প্রেমিক-প্রেমিকাদের শাস্তি দিচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তার দল। মাথায় বড় চুল বা রঙিন চুল দেখলে তা কেটে দেওয়ার জন্য তরুণদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নাপিতের কাছে। এ যেন তাঁদের সরকারি কর্মের অংশ। মানুষ কোথায় প্রেম করবে, কোথায় করবে না, সেটা দেখার দায়িত্ব যে সরকারের নয়, সে কথা বোঝার দায়ও তাঁদের নেই। জনসাধারণকে একটি ন্যায়পরায়ণ, সৎ ও বসবাসের উপযোগী সমাজ উপহার দেওয়ার বদলে যদি অনাচার করা হয়, তাহলে তা সুশাসনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

লোকজ বা নিজের সংস্কৃতি লালনে অনীহার ক্ষত দিয়ে যে পুঁজ বের হচ্ছে, সেটাই ধীরে ধীরে কবজা করে নিচ্ছে গোটা সংস্কৃতি। সে রকম একটি পরিমণ্ডলে হঠাৎ করে কোনো জেলা প্রশাসক যদি কোনো বাউলের হাতে নতুন বেহালা তুলে দেন, তবে সেটা অবশ্যই তাৎপর্যময় ঘটনা।

স্বস্তিটাকে স্থায়ী রূপ দিতে পারবেন তো

পঞ্চাশ বছরের উচ্চশিক্ষা

এনসিপিতে অস্থিরতা

ছাত্র সংসদের কাজ গুন্ডামি করা নয়

ঘটনার ঘনঘটা নিয়ে বিদায় নিচ্ছে বছর

নির্বাচনী ব্যয়

খুলনার এক গোলমেলে ব্যাপার

এভাবে চলতে থাকলে কি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে

প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্বের গুরুত্ব

সংকট, সম্ভাবনার সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ