মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট চক্রের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় অতিরিক্ত বৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট।
সংবাদ সম্মেলনে বায়রা সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্টের নেতারা মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে আরোপিত ১০টি ‘অযৌক্তিক’ শর্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান। একই সঙ্গে সৌদি আরবে সিন্ডিকেট তৈরির চেষ্টা রোধ এবং বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলা’ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
বায়রার সাবেক সভাপতি এম এ এইচ সেলিম লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন, আসন্ন বায়রা নির্বাচনকে সামনে রেখে সিন্ডিকেট বিরোধী প্রার্থীদের দমাতে সিন্ডিকেট চক্রের প্ররোচনায় মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে।
এম এ এইচ সেলিম জানান, গত ৪ অক্টোবর রুল ইন্টারন্যাশনালের মালিক রুবেল হোসেন (যিনি আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত) বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলামসহ দুই এজেন্সি মালিকের নামে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা করেন। তিনি দাবি করেন, মামলার এজাহারে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁরা কেউই ফখরুল ইসলামের প্রতিষ্ঠান থেকে মালয়েশিয়া যাননি; বরং তাঁরা সিন্ডিকেট-সংশ্লিষ্ট ‘৫ এম ইন্টারন্যাশনাল’-এর মাধ্যমে দেশটিতে গেছেন। এতেই প্রমাণিত হয় মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক।
আগামী ১৭ জানুয়ারির বায়রা নির্বাচনে সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্টের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়ে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সিন্ডিকেট ভাঙার এই প্রচেষ্টায় নির্বাচনের আগে আরও ‘গায়েবি মামলা’ আসতে পারে। এ ধরনের ষড়যন্ত্র রোধে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এম এ এইচ সেলিম মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের অনিয়মকে ‘বহুদিনের সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের পরও পূর্ববর্তী সরকারের ধারাবাহিকতায় কিছু উপদেষ্টার ‘নতজানু ও অপেশাদার’ কূটনৈতিক আচরণের কারণে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ওপর ১০টি অবাস্তব শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি শর্তগুলোর বিষয়ে বলেন, এই শর্তের মধ্যে রয়েছে—১০ হাজার বর্গফুটের অফিস, একই অফিস থেকে তিন বছরে ন্যূনতম তিন হাজার কর্মী প্রেরণের প্রমাণ, ভিন্ন ভিন্ন দেশের নিয়োগকর্তার প্রশংসাপত্র এবং নিজের নামে ও তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকা। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হলে অভিবাসন খরচ বাড়বে এবং মাত্র দুই–একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অধিকাংশ এজেন্সি বাজার থেকে বাদ পড়বে, যা হবে ‘সিন্ডিকেটের আধুনিক সংস্করণ’।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, নেপাল সরকার এসব অযৌক্তিক শর্ত প্রত্যাখ্যান করতে পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না? তিনি বৈধ সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে পেশাদার কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সিন্ডিকেট ও মানব পাচার নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বায়রার সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি রিয়াজ উল ইসলাম জানান, লাইসেন্সধারী এজেন্সিগুলো অবৈধভাবে লোক পাঠায় না, বরং এজেন্সির বাইরে সিন্ডিকেট করেই এই কাজ করা হয়।
তিনি অভিযোগ করেন, সৌদি আরবেও সিন্ডিকেট করার চেষ্টা চলছে। আগে ৪৯টি স্টেশন পর্যন্ত লোক পাঠানোর সুযোগ থাকলেও এখন তা কমিয়ে ৫টি করা হয়েছে।
রিয়াজ উল ইসলাম লিবিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, লিবিয়া একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, সেখানে লোক পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই। যারা দুবাই বা অন্যান্য দেশ হয়ে লোক পাঠায়, তারা চোরাকারবারি বা মানব পাচারকারী।
রিয়াজ উল ইসলাম আরও উল্লেখ করেন, অতীতে যারা মালয়েশিয়া বন্ধ থাকার সময় থাইল্যান্ডের জঙ্গলে লোক নিয়ে গিয়েছিল, তারা ছিল দালাল শ্রেণির লোক বা রিক্রুটিং এজেন্সি নয় এমন ভুঁইফোড় ব্যবসায়ী।
রিয়াজ উল ইসলাম জানান, থাইল্যান্ড বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় শ্রমবাজার এবং সেখানে ৫ লক্ষাধিক কর্মী নেওয়া হবে। থাইল্যান্ডের সরকার (লেবার মিনিস্ট্রি) বাংলাদেশের জন্য তাদের বাজার উন্মুক্ত করেছে এবং এটি একটি জিটুজি বা সরকারিভাবে লোক নেওয়ার চুক্তি। থাইল্যান্ডে একজন কর্মীর মাসিক বেতন ৪০০ ইউএস ডলার।
তিনি প্রত্যাশা করেন, দরিদ্র মানুষ যেন কম খরচে বিদেশে যেতে পারে এবং এই সেক্টরে সম্পূর্ণ সিন্ডিকেটমুক্ত বাজার প্রতিষ্ঠা হোক।