পাকিস্তানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ভারতে অবস্থানের বৈধ কাগজপত্র ছাড়া যারা রয়েছে, এমন অভিবাসীদের ধরপাকড় চলছে। এর মধ্যে গুজরাটে ১ হাজারের বেশি বাংলাভাষীকে সেখানকার কর্তৃপক্ষ ‘বাংলাদেশি’ বলে আটকের দাবি করেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারত সরকার যাদের ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে দাবি করবে, তাদের পরিচয় যাচাই করা হবে এবং যদি তারা বাংলাদেশের নাগরিক প্রমাণিত হয়, তাহলে ফেরত নেওয়া হবে।
আজ রোববার (২৭ এপ্রিল, ২০২৫) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করার সময় তিনি এই মন্তব্য করেন।
ভারতে বাংলাদেশি আটক হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, পত্রপত্রিকায় এ বিষয়ে খবর বেরিয়েছে, তবে সরকারিভাবে বাংলাদেশ সরকারকে কোনো কিছু জানানো হয়নি। তিনি বলেন, ‘অফিশিয়াল কমিউনিকেশন দিলেও, আমাদের দেখতে হবে যে তারা আসলে বাংলাদেশের লোক কিনা। যদি বাংলাদেশের মানুষ হয়, আমরা অবশ্যই ফেরত নেব।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, কেউ আটক হলে তিনি বাংলাদেশের মানুষ কি না, সেটাও প্রমাণ সাপেক্ষ। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যে ভারতেও প্রচুর বাংলাভাষী মানুষ আছে। কাজেই বাংলায় কথা বললেই যে বাংলাদেশের মানুষ, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।’
ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনায় বাংলাদেশের ওপর সরাসরি কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও মনে করেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান জামানায় সবকিছু সবাইকে কমবেশি প্রভাবিত করে। কাজেই কোনো কিছু আমাদের একটুও প্রভাবিত করবে না, সেটা আমি বলি না। তাদের যেই সংঘাত সেটা আমাদের সরাসরি প্রভাবিত করার কিছু নেই। কারণ, আমরা এতে কোনো পক্ষ নিইনি।’ তবে যেকোনো সংঘাত বা সম্পর্ক খারাপ হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ে, এটা স্বীকার করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ চায় দক্ষিণ এশিয়ায় বড় ধরনের কোনো সংঘাত যেন না হয়। এ কারণে অন্তর্বর্তী সরকার চায়, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রশমন হোক। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতার জন্য বাংলাদেশ কোনো ভূমিকা পালন করতে পারে কিনা–এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি মনে করি না, এ মুহূর্তে আমাদের মধ্যস্থতা করার মতো কোনো ভূমিকা নেওয়া উচিত। আমরা চাইব, তারা নিজেরা সমস্যার সমাধান করুক।’
ভারত ও পাকিস্তান সহায়তা চাইলে এবং মধ্যস্থতা করতে অনুরোধ করলে, তখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘তার আগে আমরা আগ বাড়িয়ে কিছু করতে চাই না।’
দু-একটি দেশের পক্ষ থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাবের উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘মধ্যস্থতার মাধ্যমে হোক বা দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে হোক, বাংলাদেশ চায় উত্তেজনা প্রশমিত হোক এবং শান্তি বজায় থাকুক।’
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তানের সুসম্পর্ক আছে দাবি করে উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি চায়। বাংলাদেশ চায় না এখানে কোনো বড় ধরনের সংঘাত সৃষ্টি হোক, যা মানুষের বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে।’