ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়লেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে তিনি এ বিষয়ে সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে যান। বরং সামগ্রিক পরিস্থিতিকে ‘শান্ত’ ও ‘শৃঙ্খলাপূর্ণ’ হিসেবে তুলে ধরেন।
গতকাল বুধবার লন্ডনের খ্যাতনামা গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউস আয়োজিত এক সংলাপে অংশ নেন ইউনূস। সেখানে এক প্রবাসী সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি যখন দায়িত্ব নিলেন, বলেছিলেন আপনার প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সবাইকে একত্রিত করা। কিন্তু আমরা দেখেছি, বঙ্গবন্ধুর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং প্রশাসন তখন নীরব থেকেছে। আপনি কীভাবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করবেন, যখন এমন ঐতিহাসিক স্থাপনা নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়?’
প্রশ্নের জবাবে মুহাম্মদ ইউনূস বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ধ্বংসের প্রসঙ্গে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে বলেন, ‘এখন সবকিছুই আমরা সামাল দিতে পারছি। এটি এমন এক সময়, যখন আমরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ পার হয়ে এসেছি। এখন পরিস্থিতি শান্ত, শৃঙ্খলায় এসেছে এবং আমরা এগুলো মোকাবিলা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতিকে শৃঙ্খলায় আনাই ছিল একটি বড় কাজ। কারণ, জনগণ ও পুলিশের মধ্যে আস্থাহীনতা ছিল। পুলিশ নিজেরাই শিশুদের গুলি করেছে—এমন অভিযোগে ছাত্ররা ক্ষুব্ধ ছিল। ফলে একধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল, যা মোকাবিলা করা সহজ ছিল না।’
প্রধান উপদেষ্টা দাবি করেন, ‘এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। মানুষ এখন পুলিশকে গ্রহণ করছে। যেসব পুলিশ সদস্য বা কর্মকর্তা বর্বরতায় যুক্ত ছিল, তাদের চিহ্নিত করে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে এবং তারা বিচারাধীন।’
বিচার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে ইউনূস বলেন, ‘সবকিছু ভিডিওতে ধারণ করা হয়েছে। কে কী করেছে, তা জানা আছে। আমরা দেশকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করছি। এটা গুজব নয়—সব প্রমাণ রয়েছে।’
রাজনৈতিক ঐক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা আমাদের এক নম্বর লক্ষ্য। আমরা সবাইকে একত্রে বসিয়ে ‘জুলাই চার্টার’ প্রণয়নের চেষ্টা করছি। আশা করছি, জুলাই মাসেই সব দলের অংশগ্রহণে সেই চার্টার ঘোষণা করা যাবে।’
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হামলা চালিয়ে তা লুটপাট ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার ছয় মাস পর ২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ‘বুলডোজার মিছিল’ নামে একটি ঘোষিত কর্মসূচিতে ঐতিহাসিক ওই বাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে বিতর্ক ও শোকের আবহ তৈরি হয়।