সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছেন বিশেষ আইনে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান প্রণয়ন করেছিলেন মূলত যুদ্ধাপরাধের দায়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিচার করার উদ্দেশ্যে। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে এই আইনটিকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতাদের পক্ষ থেকে এই বিচারপ্রক্রিয়া ও রায় নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করার নৈতিক এবং আইনগত সুযোগ নেই। কারণ, এই আইনটি প্রণয়ন করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। আইনটি প্রকৃতপক্ষে ব্যবহার করেছিলেন শেখ হাসিনা। সে আইন ব্যবহার করে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে ভয়াবহতম ঘটনার অকাট্য প্রমাণ, অডিও, ভিডিও, নির্দেশনা—সবকিছু ট্রাইব্যুনাল বিবেচনা করে রায় দিয়েছেন। আইনগতভাবে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই বিচারটি করার জন্য যেসব স্বচ্ছ প্রক্রিয়া, তা অনুসরণ করা হয়েছে। পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ছিলেন আসামি। তাঁকে করা হয়েছে রাজসাক্ষী। এই আইনে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি রাজসাক্ষী হন কিংবা আসামি সাক্ষীর ক্যাটাগরিতে আসেন—তাহলে তাঁকে ট্রাইব্যুনাল ক্ষমা করবেন। ট্রাইব্যুনাল একদিকে বলছেন তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে, আবার একইভাবে তাঁকে পাঁচ বছর সাজা দেওয়া হয়েছে। এই একটা জায়গায় আমার কাছে মনে হয়েছে, আইনটি সঠিকভাবে প্রয়োগ হয়নি। হয় তাঁকে পূর্ণাঙ্গ সাজা কিংবা ক্ষমা করা দরকার ছিল।
আমি মনে করি, পুলিশের সাবেক আইজি তাঁর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রসিকিউশনকে খুব বেশি সাহায্য করেননি। কারণ যেসব উপকরণের ওপর ভিত্তি করে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে—এগুলো আমরাও সামাজিক মাধ্যমে ও মিডিয়ায় দেখেছি। কথা হচ্ছে, এই কণ্ঠস্বর এবং এই নির্দেশনা সাবেক প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন কি না? সেটা তো ল্যাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং এই প্রমাণটা কিন্তু শুধু বাংলাদেশের ল্যাবে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে যে তদন্ত করা হয়েছে, সেখানেও কিন্তু এর সত্যতা পেয়েছে।
রুহুল কুদ্দুস কাজল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য।