হোম > জাতীয়

জুলাই হত্যাকাণ্ড: ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ের অপেক্ষা, ৩৯৭ দিনের পরিক্রমা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায় আজ সোমবার ঘোষণা হতে যাচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে এটিই প্রথম, যার রায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ঘোষণা করা হবে।

রায় ঘোষণার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করার কথা রয়েছে। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই গুরুত্বপূর্ণ রায় ঘোষণা করবেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

৩৯৭ দিনের প্রক্রিয়া

গণ-অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে এই মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) দায়ের হয় এবং একই দিনে ট্রাইব্যুনাল তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

‘মিসকেস’ হিসেবে শুরু হওয়া এই মামলার টাইমলাইন:

১৭ অক্টোবর, ২০২৪: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি।

১৬ মার্চ, ২০২৫: মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

১২ মে, ২০২৫: চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। এই প্রতিবেদনে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম যুক্ত হওয়ায় মোট আসামি হন তিনজন।

১ জুন, ২০২৫: প্রসিকিউশন কর্তৃক তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল।

১০ জুলাই, ২০২৫: ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন; সেদিনই আইজিপি মামুন রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন।

৩ আগস্ট, ২০২৫: চিফ প্রসিকিউটরের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু (সরাসরি সম্প্রচারিত হয়)। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত খোকন চন্দ্র বর্মণের জবানবন্দির মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।

৮ অক্টোবর, ২০২৫: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষ।

১২ অক্টোবর–২৩ অক্টোবর, ২০২৫: যুক্তিতর্ক উপস্থাপন।

১৭ নভেম্বর, ২০২৫: রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ।

‘মিসকেস’ দায়ের থেকে রায় ঘোষণা পর্যন্ত এই মামলার মোট সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।

প্রধান আসামি শেখ হাসিনা ও রাজসাক্ষীর জবানবন্দি

এই মামলার প্রধান আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আর অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক এবং তাঁরা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।

মামলায় গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘রাজসাক্ষী’ বা ‘অ্যাপ্রুভার’ হিসেবে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি জানান, গত বছরের ১৮ জুলাই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে সরাসরি ‘লেথাল উইপন’ (প্রাণঘাতী অস্ত্র) ব্যবহারের নির্দেশ পেয়েছিলেন।

৫টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ, রাষ্ট্রপক্ষের মৃত্যুদণ্ড দাবি

মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ (প্রসিকিউশন) একাধিকবার দাবি করেছে, শেখ হাসিনা ছিলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী সব ধরনের অপরাধের মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরীহ, নিরস্ত্র দেড় হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয় এবং ৩০ হাজার মানুষকে আহত করা হয়েছিল।

শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে, যা প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করার দাবি করেছে:

১. উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান;

২. প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ;

৩. রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা;

৪. রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা;

৫. আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।

যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় প্রসিকিউশন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে শহীদ পরিবার ও আহত আন্দোলনকারীদের মধ্যে হস্তান্তরের আবেদন জানিয়েছে।

আপিলের সুযোগ নেই, নারী হিসেবে বিশেষ সুবিধা নয়

গতকাল রোববার ব্রিফিংয়ে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম নিশ্চিত করেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সাজা হলে তাঁরা আপিল করতে পারবেন না, কারণ তাঁরা পলাতক। ট্রাইব্যুনাল আইনে বলা আছে, আপিলের সুযোগ নিতে হলে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হয়, অথবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হতে হয়।

নারী হিসেবে বিশেষ সুবিধা প্রসঙ্গে প্রসিকিউটর বলেন, রায় প্রদানের ক্ষেত্রে নারীকে সাধারণ বা ট্রাইব্যুনাল আইনে আলাদা কোনো অগ্রাধিকার দেওয়া হয় না। তাঁর অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করেই শাস্তি দেওয়া হবে।

বিদেশি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারের বক্তব্য অগ্রাহ্য

বিদেশি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর বলেন, ট্রাইব্যুনালে হাজির না হয়ে তিনি যেসব কথা বলছেন, তা আইনের দৃষ্টিতে কোনো বক্তব্য নয়। প্রসিকিউটর আরও উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার ভয়েস রেকর্ড উন্মুক্ত আদালতে বাজিয়ে শোনানো হয়েছে, যেখানে কথোপকথনের মাধ্যমে তিনি নিজ মুখে মারণাস্ত্র ব্যবহারের আদেশটা দিয়েছেন বলে শোনা গেছে। ভারতের মাটিতে বসে দেওয়া তার বক্তব্যকে প্রসিকিউশন আমলে নিচ্ছে না, এটিকে সরকার ও কূটনৈতিক বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আদালত অবমাননায় ৬ মাসের সাজা

‘২২৬ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’—শেখ হাসিনার এমন একটি বক্তব্যের অডিও রেকর্ড বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা উল্লেখ করে আদালত অবমাননার মামলা করে প্রসিকিউশন। এই মামলায় চলতি বছরের ২ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও তিন মামলা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মামলা ছাড়াও মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও তিনটি মামলা চলমান:

হেফাজত মামলা (২০১৩) : মতিঝিল শাপলা চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায় ২১ জনকে আসামি করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী সময় ১২ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।

গুমের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ (২টি মামলা) : আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলে গুমের ঘটনায় করা এই দুটি মামলায় শেখ হাসিনাসহ মোট ২৮ জন আসামি। আসামিদের মধ্যে সাবেক ও বর্তমান ২৩ জন সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন। এই দুটি মামলার পরবর্তী শুনানি ২৩ নভেম্বর।

মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ও ট্রাইব্যুনালের প্রেক্ষাপট

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যাত্রা শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে এখন পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ৪৪টি ও ট্রাইব্যুনাল-২ থেকে ১১টি মামলার রায় এসেছে। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।

বর্তমানে পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশের’ প্রস্তুতি

প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার জানান, ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে শাস্তি দিলে ইন্টারপোলে তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ আবেদন করা হবে, যাতে তাঁর বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করা যায়।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বঙ্গভবনে সিইসি

বাংলাদেশের ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শিল্প’ অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ইউনেসকোর স্বীকৃতি

আজ সংবাদ সম্মেলনে আসছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাব মেনেও মনবদল ইয়াহিয়ার

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১২ ফেব্রুয়ারি

হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে শপথ নিলেন এনায়েত হোসেন

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

মৎস্য ভবন এলাকায় নতুন এক সেফ হাউসের বর্ণনা দিলেন হাসনাত

পূর্বাঞ্চলে ট্রেনের ভাড়া বাড়ল সর্বোচ্চ ২১৪ টাকা

হজযাত্রীদের প্লেনের টিকিটে ৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার