রোববার, ৩০ জুন ২০১৯। রৌদ্রোজ্জ্বল একটি দিন। কেনিয়ার নাইরোবি থেকে ৮ ঘণ্টা ৬ মিনিটের দীর্ঘ আকাশপথ পাড়ি দিচ্ছে কেনিয়া এয়ারওয়েজের বোয়িং ৭৮৭-৮। দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের হিথরো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের প্রস্তুতিপর্বে তীব্র গতিতে নিচু আকাশে নেমে এসেছে বিমানটি। বিশাল উড়ুক্কু যানের পেটের নিচে খোপ ছেড়ে নেমে এসেছে সব কটি চাকা। ঠিক তখনই প্রচণ্ড ঠান্ডায় জমে যাওয়া এক ব্যক্তির প্রাণহীন দেহ প্রায় ১ হাজার মিটার বা ৩ ফুট উঁচু থেকে নিচে পড়তে দেখা যায়। পরে পুলিশ বিমানবন্দরের পাশের একটি বাগান থেকে কেনিয়ার এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে। তদন্ত শেষে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, হতভাগ্য যুবকটি সবার চোখ এড়িয়ে বিমানের চাকার খোপে লুকিয়ে লন্ডনে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন।
চাকার খোপে লুকিয়ে এ ধরনের বিমান ভ্রমণকে বলা হয় ‘স্টোঅ্যাওয়ে’।
বিমানের চাকার খোপে ভ্রমণ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। উড্ডয়নের সময় বাতাসের প্রচণ্ড ঝাপটায় ছিটকে পড়ে অনেকেই প্রাণ হারায়। আবার আকাশে শ্বাসকষ্ট এবং হিমশীতল ঠান্ডার কারণে বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা জানিয়েছে, ১৯৪৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৭৩ বছরে বিমানের চাকার খোপে পালিয়ে ভ্রমণ করেছে ১২৮ জন। তবে যেসব হতভাগ্য ভ্রমণকারী বনে-বাদাড়ে বা সাগর, নদীতে পড়েছে, তাদের হিসাবে ধরা হয়নি।
সংখ্যায় অতি নগণ্য হলেও যারা বেঁচে ছিল, এমন ভাগ্যবানদের একজন হলো সোমালিয়ার বালক, ১৫ বছরের ইয়াহিয়া আবদি। আকাশপথে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে হাওয়াই দ্বীপের দূরত্ব প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার বা ২ হাজার ৫০০ মাইল। বিমানে সাড়ে ৫ ঘণ্টা সময় লাগে। ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল বিমানের চাকার
খোপে লুকিয়ে এত সময় ধরে ভ্রমণ করেও অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছে ইয়াহিয়া।
খোঁজ পড়ে এক দুঃখিনী মায়ের। যুদ্ধতাড়িত ইয়াহিয়ার মা ৩৩ বছর বয়সের উবাহ মোহাম্মদ আবদুল নিজ বাস্তুভিটা ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন ইথিওপিয়ায়। সেখানে দুই সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি। সেই ২০০৬ থেকে ৮ বছর নিজ সন্তানের কোনো খবরই তিনি জানতেন না। এ ঘটনার কয়েক দিন পর তাঁকে যখন খবরটি জানানো হয়, তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। সন্তানকে কাছে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন।
পরে যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী ও অভিবাসন অধিদপ্তর অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে ইয়াহিয়ার প্রাণপ্রিয় মা-ভাইবোনকে ইয়াহিয়ার কাছে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে দেয় এবং সেখানে তাঁদের স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করে।