এলিস অ্যান লেইডলো (এলিস মুনরো), সাহিত্যিক। উইংহাম, অন্টারিওতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৩১ সালে। কানাডার মানুষের গল্প লিখতেন তিনি। ১৯ বছর বয়সে তাঁর প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে তিনি শুধু লিখেই গেছেন কানাডার পারিপার্শ্বিকতা এবং স্থানীয় সংস্কৃতির আলোকে। কানাডা এবং আন্তর্জাতিক অনেক সাহিত্য পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। ২০১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান।
১৯৮৮ সালে প্রথম যখন এলিস অ্যান লেইডলোর দেশ টরন্টো নগরে এসেছিলাম, কম জনসংখ্যা এবং বিভিন্ন জাতিসত্তার অধিকার বজায় রাখা মানুষের জীবনযাপন আমার চোখ খুলে দিয়েছিল। সাম্প্রতিককালের বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় কানাডার অনেক মজার তথ্য। যেমন এখানকার ৬৩ ভাগ মানুষ মনে করেন, তাঁদের সবচেয়ে গর্বের বিষয় হচ্ছে আদিবাসী অধিকার। ১৮ থেকে ৩৪ বছরের কানাডাবাসীর মধ্যে শতকরা ৬৯ ভাগ মানুষ দেশ নিয়ে গর্ব করেন। স্বাধীনতা ও সাম্য, শান্তি ও নিরাপত্তা এবং বহুত্ববাদিতা তাঁদের অন্যতম গর্বের বিষয়। অথচ ২০১৬ সালের জনশুমারি অনুযায়ী শতকরা প্রায় ২২ ভাগ মানুষ বিদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন বলে জানা যায়।
ইউএস নিউজ ২০২৩ সালে কানাডাকে বিশ্বের দ্বিতীয় উন্নত দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছিল, প্রথমে ছিল সুইজারল্যান্ড। ওয়ার্ল্ড ওয়েলদিয়েস্ট সিটিজ রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের বেশি ধনকুবেরের আবাস টরন্টো।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা লোকজনের নিজস্ব সংস্কৃতি কানাডায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। প্রথমত আদিবাসী ফ্রেঞ্চ ও ব্রিটিশ সংস্কৃতি, তারপর আমেরিকান সংস্কৃতি কানাডাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। ছিমছাম রাস্তা এবং মহাসড়কের সৌন্দর্যের সঙ্গে সংগতি রেখে আদিবাসী কিংবা অভিবাসীরা বাড়িঘর সাজিয়ে রাখেন।
পুরো বিশ্ব থেকে প্রায় ১০ কোটি মানুষ প্রতিবছর কানাডা ভ্রমণে আসেন। তাঁদের পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম প্রধান জায়গা নায়াগ্রা জলপ্রপাত। এই জলপ্রপাত দেখতে আসা পর্যটকেরা রাবারের ডিঙি ভাসিয়ে প্রপাতের নিচ দিয়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়ান। ডিঙি ছাড়াও এখানে আছে লঞ্চভ্রমণের সুযোগ।
ব্যানফ ন্যাশনাল পার্ক কানাডার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এর লেক ও পাহাড়ঘেরা সৌন্দর্য ইউনেসকোর অন্যতম ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থান হিসেবে স্বীকৃত। পৃথিবীর প্রায় ৪০ লাখ মানুষ এই জায়গা ভ্রমণে আসেন প্রতিবছর। এ ছাড়া কানাডার রয়েছে শেপিং কানাডা, টিচার্স জোন, গ্র্যান্ড হল, মর্নিং স্টার, আউট সাইড দ্য লাইনস ইত্যাদির মতো আকর্ষণীয় অ্যাকটিভিটি জোন।
শেপিং কানাডা অনুষ্ঠানে দেশটির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন এমন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে সচিত্র আলোচনা হয়। টিচার্স জোন কানাডা হিস্ট্রি মিউজিয়াম পরিচালিত একটি অনলাইন অ্যাকটিভিটির জায়গায়। এখানে কানাডার ইতিহাস ও ঐতিহ্য দেখা ও শেখা যায়। গ্র্যান্ড হল হচ্ছে কানাডার আদিবাসী ঐতিহ্যের সংগ্রহশালা। আর মর্নিং স্টার হলো বিখ্যাত শিল্পী অ্যালেক্স জানুয়ারির চিত্রকর্ম। এটি সাততলা ভবনের মধ্যবর্তী একটি ডোমে আঁকা হয়েছে। কানাডার ৫২ জন নারী শিল্পীর প্রায় ২০০ বছরের শিল্পকর্ম উপস্থাপন করা হয়েছে আউট সাইড দ্য লাইনসে। নারীদের যুদ্ধবিগ্রহে অংশগ্রহণ এবং তাঁদের সামরিক অবদানের স্বীকৃতি প্রদর্শন করাই এই শিল্পের অন্যতম দিক।
কানাডায় যাঁরা বিভিন্ন দেশ থেকে এসে স্থায়ী হয়েছেন, এমন আত্মীয়স্বজনের মেলবন্ধন যথেষ্ট গভীর। দেখা যায়, আত্মীয় না হয়েও বন্ধুত্ব এবং সামাজিক কর্মতৎপরতায় জড়িয়ে পড়েছেন ভালোবাসার বন্ধনে। ৪০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে গিয়ে প্রবাসী বন্ধুর বাগানের লাউ, কুমড়া নিয়ে আসতে দেখেছি অনেককে।
মিলস অন দ্য হুইলস নামে একটি কর্মসূচি আছে কানাডায়। এর মাধ্যমে জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য খাবার সরবরাহ করা হয় স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে। এই দেশের উদ্যোগী নাগরিকেরা নিজ দায়িত্বে খাবার পৌঁছে দেন। কানাডায় নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রয়েছে চাকরি ও ইনস্যুরেন্স, গৃহঋণ, শিশু সহায়তা, শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক সুবিধা ও ঋণ, অক্ষমতা সহায়তা ইত্যাদি। শ্রমিকদের সহায়তা করার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে অস্থায়ী বেকারত্ব এবং পরিবার সহায়তা কর্মসূচিতে সরকার ব্যবস্থা নেয়। কোনো কোনো অঞ্চলে হাসপাতালে বিনা মূল্যে চিকিৎসা পাওয়া যায় এ দেশে। আছে নির্দিষ্ট বয়সের পর কানাডায় সব চিকিৎসা এবং ওষুধপথ্য বিনা মূল্যে দেওয়ার রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা।