খেয়াল করলে দেখবেন, যে মৌসুমে যেসব ফলমূল ও শাকসবজি পাওয়া যায়, সেগুলো সেই মৌসুমের রোগবালাই এবং ত্বক ও চুলের সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। সেদিক থেকে হেমন্ত ও শীতকালে ত্বক-চুল একটু বেশিই সমস্যার সম্মুখীন হয়। ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে ওঠে, পা ফাটে, চুলে খুশকি ও রুক্ষতার সমস্যা দেখা দেয়। এসব সমস্যার সমাধান দিতে পারে বাজারে ওঠা রকমারি ফল ও সবজি। এই মৌসুমে পাওয়া সবজি ও ফলমূল খাওয়ার পাশাপাশি রূপচর্চায় ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যাবে। যদিও শীতে ত্বক ও চুলের সমস্যার সমাধানে বিশেষজ্ঞের পরামর্শের বিকল্প নেই। কিন্তু রোজকার যত্নআত্তি বা পরিচর্যার প্রায় সব উপাদানই এই ঋতুতে থাকে হেঁশেলে। একটু বুঝেশুনে ব্যবহার করলেই হলো। এই শীতে ত্বক ও চুলের যত্নে কোন কোন প্রাকৃতিক উপাদান বেছে নিতে পারেন, দেখে নিন।
ব্রণ ও ব্ল্যাকহেডস দূর করবে ধনেপাতা
ত্বকের রোমকূপে ময়লা জমে কালো রং ধারণ করলেই আমরা তাকে ব্ল্যাকহেডস বলি। এটি এই ঋতুতে হওয়া ত্বকের সাধারণ সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে পারলারে দামি ফেশিয়াল না করে ফ্রিজ থেকে ধনেপাতা বের করে ব্যবহার করুন। ধনেপাতায় প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে, যা রোমকূপ পরিষ্কারে ভালো কাজ করে। একটি ছোট বাটিতে এক চা-চামচ লেবুর রস এবং এক চা-চামচ ধনেপাতার রস মেশান। এই মিশ্রণ ত্বকের যে অংশে ব্ল্যাকহেড আছে, সেখানে লাগান। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকে তেল ও ময়লা জমে ব্রণের সৃষ্টি হতে পারে। সেগুলো পরিষ্কার করে ত্বক নরম ও মোলায়েম করে তুলতে ধনেপাতার জুড়ি নেই। ব্রণ দূর করতে ১ মুঠো ধনেপাতা ও ১ চা-চামচ লেমন গ্রাস একসঙ্গে বেটে ব্রণের ওপর লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
ত্বকের সংক্রমণ এবং রোদে পোড়া দাগ দূর করবে টমেটো
টমেটোর রস ত্বক পরিষ্কার রাখতে এবং ব্রণের প্রবণতা কমাতে সহায়তা করে। এর মধ্যকার ভিটামিন সি ত্বকের যেকোনো সংক্রমণ সারিয়ে তুলতে পারে। যাঁদের ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত, তাঁরা নিয়মিত টমেটো চটকে মুখে ভালো করে ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে মুখের তেলতেলে ভাব অনেকটা কমে যাবে। রোদে পোড়া দাগ টমেটো খুব সহজে তুলে ফেলতে পারে। চাইলে টক দই এবং টমেটোর মিশ্রণে ঘরে প্যাক তৈরি করে নিতে পারেন। এই মিশ্রণ মুখে মেখে ২০ মিনিট রেখে দিন। এরপর মুখ ধুয়ে ফেলুন।
ত্বক মসৃণ করতে ব্যবহার করুন কমলালেবু
ত্বকে তেলের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং ত্বক মসৃণ করে তুলতে কমলালেবুর রস ও খোসা ব্যবহার করতে পারেন। ত্বকের জন্য তাজা কমলার খোসার সঙ্গে মসুর ডাল বেটে নিন। এবার এই মিশ্রণে অল্প টক দই ও ২ টেবিল চামচ কমলার রস যোগ করুন। এই মিশ্রণ সপ্তাহে তিন দিন পুরো শরীরে মেখে নিন। এতে ত্বক মসৃণ তো হবেই, দাগছোপও দূর হবে।
চুল পড়া ও খুশকির সমস্যা দূর করবে বিটরুট
বিটরুটে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এর রস ভালো করে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে নিতে পারেন। অথবা নারকেল তেলের সঙ্গে বিটের রস মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত ব্যবহারের ফলে চুল পড়া ও খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। বলে রাখা ভালো, বিটের রস ত্বকের বলিরেখা কমাতে এবং ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন সি ত্বকে কোলাজেন বাড়িয়ে দেয়। বিটের রসের সঙ্গে মুলতানি মাটি মিশিয়েও ত্বকে ব্যবহার করা যায়।
মাথার ত্বকের সংক্রমণ দূর করে আমলকী
আমলকী চুলের খুশকি কমাতে সাহায্য করে। এর রস নিয়মিত মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করলে তা ভালোভাবে পরিষ্কার হবে এবং সেখানে ময়লা জমতে পারবে না। আমলকীতে রয়েছে ভিটামিন সি, প্রদাহরোধী ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ। তাই এটি মাথার ত্বকের যেকোনো ধরনের সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে এবং ফাঙ্গাসজনিত সংক্রমণে বাধা দেয়।
ত্বকের মরা কোষ ঝরায় আনারস
শীতে ত্বকের জন্য এক্সফোলিয়েশন খুব জরুরি। তাই এ সময় নিয়মিত ত্বকে স্ক্রাব ব্যবহার করতে হবে। রূপ রুটিনে আনারস স্ক্রাব হিসেবে খুব ভালো। এটি ছোট টুকরো করে কেটে নিন। তারপর টুকরোগুলো ত্বকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করুন। আনারসের রসে থাকা এনজাইম ব্রোমেলেইন ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার করে তোলে। ত্বকের প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতেও খুব ভালো কাজ করে।
ব্রণের দাগ দূর করে শসা
শসাকে প্রাকৃতিক টোনার বলা হয়। এটি ত্বকের পোড়া দাগ কমাতে সাহায্য করে। এর রসে রয়েছে প্রাকৃতিক ব্লিচিং, যা ত্বকের কালচে দাগ কমিয়ে দেয়। চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে শসার রস ব্যবহার করা যেতে পারে। অনেক সময় ত্বকের ব্রণ ভালো হয়ে গেলেও দাগ রয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ বাটা ও দইয়ের সঙ্গে শসার রস মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
সূত্র: স্টাইলক্রেজ, হেলথ লাইন, ফেমিনা