ডায়াবেটিসে রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি বা খুব কম—দুটোই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। রক্তে শর্করাকে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে পারলে জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। বেশির ভাগ মানুষ জানেন, কোন খাবার রক্তে শর্করার ওপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু অনেকে হয়তো জানেন না, খাবার খাওয়ার সময়ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যেখানে শর্করাজাতীয় খাবার বিপাকের জন্য শরীরে যতটুকু ইনসুলিন প্রয়োজন হয়, ততটুকু থাকে না। আপনারা জেনে থাকবেন, ডায়াবেটিস দুই ধরনের হয়—টাইপ-১ ও টাইপ-২। টাইপ-১ ডায়াবেটিসে ইনসুলিন একেবারেই থাকে না। তাই রোগ ধরা পড়ার সময় থেকে ইনসুলিন নিতে হয়। আর টাইপ-২ ডায়াবেটিসে শরীরে ইনসুলিন থাকে, কিন্তু ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের জন্য তা কাজ করতে পারে না। যেহেতু ডায়াবেটিস রোগে শর্করাজাতীয় খাবারের বিপাকে সমস্যা হয়, তাই আমরা চিকিৎসকেরা এ ধরনের খাবার; যেমন চিনি, মিষ্টি, ভাত, মিষ্টি ফল, মধু ইত্যাদি পরিমাণমতো খেতে বলি। ডা. মাজহারুল হক তানিম, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ
কেন খাবারের সময় মেনে চলা জরুরি
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন একই সময়ে নিয়মিত খাবার ও প্রয়োজন অনুযায়ী হালকা নাশতা খেলে রক্তে শর্করা তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকে এবং শরীরের শক্তির মাত্রাও বজায় থাকে। বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এবং সেই সব টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য, যারা ইনসুলিন বা কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণ করেন।
খাবার বাদ দিলে কী সমস্যা হয়
খাবার না খেলে অনেক সময় পরে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। এতে রক্তে শর্করা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে। আবার নিয়মিত খাবার না খেলে রাতে ঘুমের মধ্যেও রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যাকে বলা হয় রাতের হাইপোগ্লাইসেমিয়া। এটি বিপজ্জনক হতে পারে; কারণ, ঘুমের মধ্যে অনেক সময় বোঝা যায় না কী হচ্ছে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করা কমে গেলেও কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। একে বলা হয় হাইপোগ্লাইসেমিয়া আন অ্যাওয়ারনেস। এটি গাড়ি চালানো বা ব্যায়ামের সময় ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
সকালের নাশতা গুরুত্বপূর্ণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সকালের নাশতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর নাশতা দিনের শুরুতে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং সারা দিন শক্তি ধরে রাখে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে ভালোভাবে খেয়ে দুপুর ও রাতের খাবার তুলনামূলক হালকা রাখলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ওজন ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ইনসুলিনের প্রয়োজনও কমে। অন্যদিকে, নাশতা বাদ দিলে বিকেল ও রাতে রক্তে শর্করা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষ পরে সেই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলেন।
দুপুর ও রাতের খাবার
দুপুর ও রাতের খাবারে প্রতিদিন প্রায় একই পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট রাখা ভালো। এতে রক্তে শর্করার ওঠানামা কম হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, খুব দেরিতে রাতের খাবার খাওয়া উচিত নয়। ঘুমানোর খুব কাছাকাছি সময়ে রাতের খাবার খেলে ওজন এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
নাশতার প্রয়োজন
সব ডায়াবেটিস রোগীর নিয়মিত নাশতার প্রয়োজন হয় না। রক্তে শর্করার মাত্রা ও ক্ষুধার ওপর বিষয়টি নির্ভর করে। তবে ইনসুলিন গ্রহণকারী বা যাঁদের রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার ঝুঁকি আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে হালকা নাশতা উপকারী হতে পারে। রাতে রক্তে শর্করা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকলে ঘুমের আগে অল্প নাশতা উপকারী হতে পারে।
ব্যায়াম ও খাবারের সময়
খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পর হালকা ব্যায়াম করলে রক্তে শর্করা কমাতে সাহায্য করে; বিশেষ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে। তবে যারা ইনসুলিন বা কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ নেন, তাঁদের ব্যায়ামের আগে বা পরে সামান্য খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। ব্যায়ামের সময় পেশি বেশি গ্লুকোজ ব্যবহার করে, ফলে রক্তে শর্করা কমে যেতে পারে। তাই ব্যায়ামের সময় খাবার ও ইনসুলিনের সমন্বয় চিকিৎসকের পরামর্শে করা উচিত।
নিজের জন্য সঠিক পরিকল্পনা কীভাবে করবেন
ডায়াবেটিসে খাবারের সময় ও ধরন ব্যক্তিভেদে আলাদা হতে পারে। তাই নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া বুঝে পরিকল্পনা করা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো—
চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের সঙ্গে আলোচনা করে খাবারের সময়সূচি ঠিক করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
সূত্র: হেলথ