আজ ২২ এপ্রিল; এক বিশেষ দিন। একটু সুন্দর করে উচ্চারণ করতে চাইলে বলতে হবে আজ ধরিত্রী দিবস। মানে পৃথিবী দিবস। ১৯৭০ সালে প্রথম এই ধরিত্রী দিবস পালিত হয়। সে বছর যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের মার্কিন সিনেটর পরিবেশগত সমস্যা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানান। সারা দেশে তখন সমাবেশ হয়। বছরের শেষ নাগাদ, মার্কিন সরকার পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা গড়ে তোলে। এখন বিশ্বের ১৯৩ টিরও বেশি দেশ প্রতি বছর এই দিবস পালন করে।
চলতি বছর আর্থ ডে বা ধরিত্রী দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে—আমাদের গ্রহে বিনিয়োগ করুন। পৃথিবীর জলবায়ু ও পরিবেশ রক্ষার্থে এই বিনিয়োগটা কী হতে পারে? বৃক্ষরোপণ তো বটেই পাশাপাশি বিদ্য়ুৎ সাশ্রয়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি অপচয় রোধ, ব্যবহার্য জিনিসের পুনর্ব্যবহার এবং বায়ু, মাটি ও পানি দূষণ রোধে সচেতনভাবে কাজ করা।
পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে ও পরিবেশ দূষণ রোধে এখন অনেক তরুণও নানাভাবে কাজ করছেন। মো. সাদিত উজ জামান তাঁদের মধ্যেই একজন। দেশের প্রথম সারির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় চার বছর কাজ করেন সাদিত। এর পর নিজের উদ্যোগে একটি ফ্যাশন হাউস চালু করেন। পাশাপাশি ব্যবহৃত টি-ব্যাগ, বেভারেজ ক্যান, ওষুধের স্ট্রিপ, চিপসের প্যাকেটের মতো জাঙ্ক ম্যাটেরিয়াল নিয়েও কাজ করছেন।
সাদিত বলেন, ‘আমরা এত বেশি পরিবেশ নোংরা করি! ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে নতুন কী করা যায়, সব সময় তা-ই ভাবতে থাকি, যা কিনা মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দেবে যে, আমরা যেন পরিবেশের ক্ষতি না করি এভাবে আবর্জনা ফেলে।’
ব্যবহৃত টি-ব্যাগের ওপর সমকালীন ঘটনা অবলম্বনে ছবি তো আঁকেনই পাশাপাশি জাঙ্ক জার্নিস নামেও তাঁর একটি প্রোজেক্ট রয়েছে। এই প্রোজেক্টের আওতায় বেভারেজ ক্যান, ওষুধের স্ট্রিপ, ম্যাচবক্স, পুরোনো ইনহেলার, বোতল, চিপসের প্যাকেটের মতো জাঙ্ক ম্যাটেরিয়াল নিয়ে কাজ করছেন সাদিত।
না, একাই সব বর্জ্যকে ফুলে রূপান্তর করে দেবেন—এমনটা ভাবেন না সাদিত। তবে মনে করেন, এর মাধ্যমে একটা বোধ তৈরি করা যাবে। বললেন, ‘আমরা যতটা পণ্য ব্যবহার করি অতটা রিসাইকেল করতে পারি না, সম্ভবও না। যেমন আমি এই কৃষ্ণচূড়া ফুলটি হয়তো চার-পাঁচটি ক্যান দিয়ে করেছি। কিন্তু এসব পণ্য তো আমি এর চেয়েও অনেক বেশি কিনি। সে ক্ষেত্রে আমার এই কাজটা একটা প্রতীকী মাধ্যম। ফলে যাদের মধ্য়ে সৃজনশীলতা আছে, তারা এ রকম কিছু হয়তো তৈরি করবে। সবাই না। তবে হ্যাঁ, পরিবেশ বাঁচাতে সবাইকেই সৃজনশীল কিছু করতে হবে, তা নয়। আমার কাজ দিয়ে আমি এই বার্তা সবার কাছে পৌঁছতে চাই যে, আমরা আবর্জনা যেখানে-সেখানে না ফেলে, নির্দিষ্ট জায়গাতেই যেন ফেলি।’
বোঝা গেল সাদিত পরিবেশবান্ধব জীবনের সংজ্ঞা নিজের জীবন দিয়েই নির্ধারণ করেছেন। পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়াটা যেমন, তেমনি প্রকৃতির ওপর বাড়তি বর্জ্যভার না চাপিয়ে বরং তা লাঘবের অন্য নামই তাঁর কাছে পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন। এই একই বিষয়ে কথা হয়েছিল সাদিকা রুমনের সঙ্গে। যাঁরা অল্প দামে সুন্দর ও টিপটপ গয়না কিনতে চান, তাঁদের কাছে ‘হরপ্পা’ নামটি পরিচিত। বিশেষ করে ফুলের প্রতি যাঁদের আগ্রহ রয়েছে, তাঁরা হরপ্পার গয়না ভালোবাসেন। ফেসবুকে গয়নার পেজ ‘হরপ্পা’ খুললেই পেয়ে যাবেন রঙিন পুঁতির সব মালা, কানের দুল, আংটি ইত্যাদি। সাদিকা রুমন এই হরপ্পার স্বত্বাধিকারী।