সাক্ষাৎকার

উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি চাকরির সুযোগ আছে জাপানে

জাপানের টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন আমিমুল এহসান খান। সম্প্রতি তিনি ‘গ্লোবাল চেঞ্জমেকার ২০২৫’-এ বিশ্বের ৫০ তরুণের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন। বর্তমানে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট লিড হিসেবে কাজ করছেন অ্যাওয়ারনেস ৩৬০ নামের একটি বৈশ্বিক তরুণ নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানে। এ ছাড়া জাপানের এশিয়ান বিজনেস নেটওয়ার্ক কোম্পানিতে মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। জাপানে উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ার নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শিক্ষা, চাকরি ও ক্যারিয়ার বিভাগের ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক খান

টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

এককথায় দুর্দান্ত এবং বৈচিত্র্যময়। প্রথম দুই বছর করোনা মহামারির কারণে অনলাইনে ক্লাস করতে হয়েছে। তবে বাকি সময়ে বিশ্বের নানা প্রান্তের সহপাঠীদের সঙ্গে মিশে সংস্কৃতির আদান-প্রদান করার সুযোগ পেয়েছি।

উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা জাপানকে কেন বেছে নিচ্ছেন?

নিরাপত্তা ও উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা জাপান উচ্চশিক্ষার জন্য আকর্ষণীয়। এখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বমানের। আর শৃঙ্খলাপরায়ণ সমাজব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত উন্নয়নে সহায়ক। অর্থনৈতিকভাবে জাপান স্নাতক থেকে পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রচুর বৃত্তি দেয়। মেধাবী কিন্তু আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ। এখানে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ বেশি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জাপানি ভাষা জানা থাকলে জীবনযাপন ও কর্মজীবনে সফল হওয়া অনেক সহজ হয়।

জাপান ও বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য কেমন দেখছেন?

জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা মূলত গবেষণাকেন্দ্রিক, প্রয়োগমুখী এবং লক্ষ্যভিত্তিক। এখানে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, শিক্ষার্থীর মতামত, নিয়মিত প্রেজেন্টেশন এবং গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক উন্মুক্ত, প্রশ্ন করা এবং আলোচনায় অংশ নিতে উৎসাহিত করা হয়। বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এখনো অনেক ক্ষেত্রে মুখস্থনির্ভর এবং গতানুগতিক। তবে শিক্ষার্থীদের শেখার আগ্রহ অসীম। জাপানে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, আত্মযত্ন এবং পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই জীবনমুখী শিক্ষা শৃঙ্খলাপরায়ণ সমাজ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। এভাবে জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা দেশের প্রচলিত ব্যবস্থার থেকে ভিন্নতা সৃষ্টি করে।

জাপানের ভর্তিপ্রক্রিয়া কেমন এবং কতটা সময় লাগে?

জাপানে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তিপ্রক্রিয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ। সাধারণত এটি ৬-৭ মাস সময় নেয়। প্রথমে শিক্ষার্থীকে পছন্দের মেজর ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখানে পার্টটাইম কাজের সুযোগের একটা বিষয় রয়েছে। পরবর্তী ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় অনুযায়ী অনলাইনে আবেদন করতে হয়।

সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথিপত্র ডাকযোগে পাঠাতে হয়। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে সাক্ষাৎকার নেয়, আবার কিছুতে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে হয়। অফার লেটার এবং বৃত্তি নিশ্চিত হলে এক বছরের টিউশন ফিসহ অন্যান্য ফি অগ্রিম পরিশোধ করতে হয়। এরপর সার্টিফিকেট অব এলিজিবিলিটির (সিওই) জন্য আবেদন করতে হয়। এতে প্রায় আড়াই মাস সময় নেয়। সিওই হাতে পাওয়ার পরই ভিসার জন্য আবেদন করতে এবং জাপানে যাত্রা করা সম্ভব হয়।

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য কী ধরনের বৃত্তি আছে, নির্বাচনের মাপকাঠি কী?

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য জাপানে বৃত্তির সুযোগ ব্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ পর্যন্ত টিউশন ফি ছাড় দিতে পারে। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাও বৃত্তি দেয়। যেমন: অনেক শিক্ষার্থী জেএএসএসও থেকে মাসিক ৪৮ হাজার ইয়েন অনুদান পান। এই বৃত্তির জন্য নির্বাচন সাধারণত হলিস্টিক বা সামগ্রিক পদ্ধতিতে হয়। এখানে শুধু একাডেমিক ফল বা ভাষার স্কোর দেখা হয় না; বরং সহশিক্ষা কার্যক্রম, ব্যক্তিগত প্রবন্ধ ও শিক্ষার্থীর সামগ্রিক প্রোফাইল গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাবর্ষের বাইরের কার্যক্রম এবং বহুমুখী প্রতিভাও সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলে।

জাপানে পড়তে গেলে আর্থিক প্রমাণ বা স্পনসরশিপের প্রক্রিয়া কেমন?

জাপানে উচ্চশিক্ষার জন্য ভিসা ও ভর্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো, আর্থিক প্রমাণ বা স্পনসরশিপ। আবেদনকারীর কাছে প্রমাণ দেখাতে হবে, তিনি পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার খরচ বহন করতে সক্ষম। স্পনসর হতে পারেন মা-বাবা, চাচা-মামা, খালা-ফুফু বা একাধিক ব্যক্তি। তাঁদের অর্থের উৎস এবং সম্পর্ক যথাযথ নথিপত্রের মাধ্যমে দেখাতে হয়। সাধারণত প্রাথমিকভাবে প্রায় ১৫ লাখ টাকা বা সমমানের অর্থ দেখাতে হয়।

জাপানে একই সঙ্গে পড়াশোনা ও কাজ করা কি সম্ভব?

হ্যাঁ, সম্ভব। তবে এটি অনুমোদিত হতে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রথমে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি নিতে হয়। এই অনুমতির অধীনে সাধারণ সেমিস্টারে শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২৮ ঘণ্টা পার্টটাইম কাজ করতে পারেন। সেমিস্টার বিরতির সময় এ সময়সীমা বেড়ে সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা পূর্ণ সময়ের কাজের অনুমতি পাওয়া যায়। নিয়ম মেনে চললে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা এবং ব্যক্তিগত খরচ উভয়ই সামলাতে পারেন।

পড়াশোনার জন্য কী কী ডকুমেন্ট প্রয়োজন?

এসএসসি ও এইচএসসির মূল সনদপত্র এবং মার্কশিট বা ট্রান্সক্রিপ্ট প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া আইইএলটিএস বা ডুয়োলিংগোর মতো ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণপত্রও লাগবে। ব্যক্তিগত নথিপত্রের মধ্যে অবশ্যই বৈধ পাসপোর্ট এবং আর্থিক নিশ্চয়তাকারীর পাসপোর্ট থাকতে হবে। আপনার প্রোফাইল শক্তিশালী করতে এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রমের সনদপত্রও জমা দিতে পারেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলো নোটারাইজড কপি হিসেবে জমা দিতে হয়।

পড়াশোনা শেষে জাপানে চাকরির সুযোগ কেমন?

জাপানে পড়াশোনা শেষে চাকরির সুযোগ অনেক। দেশে দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশি গ্র্যাজুয়েটদের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র আইটি সেক্টর; অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ারিং; রিক্রুটমেন্ট; ই-কমার্স; আইটি সাপোর্ট; ওভারসিজ সেলস। ভালো চাকরি ও দ্রুত উন্নতির জন্য জাপানি ভাষা দক্ষতা অপরিহার্য। এটি কর্মক্ষেত্রে যোগাযোগ এবং সংস্কৃতি বোঝার চাবিকাঠি।

যেমন হবে বার কাউন্সিল প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি

ক্যারিয়ারে অগ্রগতির বড় শক্তি নেটওয়ার্কিং

মেডিকেল ভর্তি: প্রস্তুতির সঠিক কৌশল

চাকরিপ্রার্থীদের শেখার আগ্রহ থাকতে হবে

চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা শুরুর ৫ ধাপ

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও বিসিএস দিলেন?

আইনে পড়ার ভবিষ্যৎ

প্রথমবার টিম লিডার হলে যেভাবে সহকর্মীদের সামলাবেন

বিসিএসের নমুনা ভাইভা: সিভিল সার্ভেন্ট কারা?

সঞ্চয়ের জাপানি পথ ‘কাকেবো’ পদ্ধতি