হোম > ইসলাম

ইসলামে মানবজীবনের নিরাপত্তা

সালমান আদীব

মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য। পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট ভাষায় এ কথা বলেও দিয়েছেন। সুরা জারিয়াতের ৫৬ নম্বর আয়াতে এসেছে, ‘আমি জিন ও মানুষ কেবল এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদত করবে।’ আর মানুষের মাধ্যমে ইবাদত তখনই বাস্তবায়ন হওয়া সম্ভব, যখন মানুষ থাকবে জীবন্ত। তাই মানুষ যেন নিরাপত্তার সঙ্গে জীবিত থেকে আল্লাহর ইবাদত করতে পারে, সে জন্য ইসলাম মানুষকে দিয়েছে বেঁচে থাকার অধিকার, জীবনের নিরাপত্তা। অন্যায়ভাবে মানব হত্যাকে করেছে নিষিদ্ধ। মহাগ্রন্থ কোরআনে আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘তোমরা কোনো প্রাণ হত্যা কোরো না; যাকে হত্যা করা আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন। তবে ন্যায়সংগত কোনো কারণ থাকলে ভিন্ন কথা।’ (সুরা আনআম: ১৫১)

এ ছাড়া সুরা নিসায় মানুষ হত্যা করলে কী কী বিধান আরোপিত হয় সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছেন। উচ্চারণ করেছেন কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি। বলেছেন, ‘এটা কোনো মুসলিমের কাজ হতে পারে না যে সে (ইচ্ছাকৃত) কোনো মুসলিমকে হত্যা করবে। ভুলবশত এরূপ হয়ে গেলে সেটা ভিন্ন কথা। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে ভুলবশত হত্যা করবে, (তার ওপর ফরজ) একজন মুসলিম দাস আজাদ করা এবং নিহতের ওয়ারিশদের দিয়ত (রক্তপণ) আদায় করা। অবশ্য তারা ক্ষমা করে দিলে ভিন্ন কথা। নিহত ব্যক্তি যদি তোমাদের শত্রু সম্প্রদায়ের লোক হয়, কিন্তু সে নিজে মুসলিম, তবে একজন মুসলিম দাস আজাদ করো। নিহত ব্যক্তি যদি এমন সম্প্রদায়ের লোক হয় (যারা মুসলিম নয় বটে, কিন্তু) তাদের ও তোমাদের মধ্যে কোনো চুক্তি রয়েছে, তবে (সে ক্ষেত্রেও) তার ওয়ারিশদের রক্তপণ দেওয়া ও একজন মুসলিম দাস আজাদ করা (ফরজ)। অবশ্য কারও কাছে (দাস) না থাকলে সে অনবরত দুই মাস রোজা রাখবে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া তওবার ব্যবস্থা। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে জেনেশুনে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম; যাতে সে সর্বদা থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি গজব নাজিল করবেন ও তাকে লানত করবেন। আল্লাহ তার জন্য মহা শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। (নিসা: ৯২-৯৩)

পবিত্র কোরআনের মতো ইসলামের দ্বিতীয় উৎস হাদিসেও অন্যায়ভাবে হত্যা করাকে বিভিন্ন উপায়ে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় গুনাহ (মহাপাপ) হলো আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, কাউকে (অন্যায়ভাবে) হত্যা করা, পিতামাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।’ (সহিহ্ বুখারি: ৬৮৭১)

ইসলামে মানুষের জীবনের অধিকার তাঁর নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এত সুসংহতভাবে করা হলেও আমরা যখন প্রায় ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থার দিকে তাকাই, তখন হতাশায় আমাদের প্রাণখানা বিষিয়ে ওঠে। তুচ্ছ কারণে ভাইয়ে ভাইয়ে খুনোখুনি, স্বার্থের লোভে বাবার ওপর প্রাণঘাতী আঘাত, কয়েক বিঘা জমির জন্য প্রতিবেশীর নিষ্পাপ শিশুসন্তান মেরে ফেলার মতো চরম ধিক্কৃত ঘটনা দেখলে মনে হয় না আমরা ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে বাস করছি। বরং মনে হয়, আমাদের বসবাস এমন এক দেশে, যেখানে স্বার্থের বিনিময়ে তাজা প্রাণের বিকিকিনি হয়। স্বার্থই যেখানে সবচেয়ে মূল্যবান কারেন্সি। মুসলমান পরিচয় রক্ষার চেয়ে স্বার্থ উদ্ধারই যেখানে জীবনের মূল লক্ষ্য।

এই যে স্বার্থান্বেষী অন্ধকারে আমাদের বসবাস, যে অন্ধকারের পথঘাটও সব অন্যায় হত্যাযজ্ঞের রক্তে পিচ্ছিল। আমরা যদি এই অভিশপ্ত অন্ধকার ছেড়ে আলোয় আসতে চাই, হাঁটতে চাই সৌভাগ্য সমৃদ্ধি ও সম্প্রীতির পথে, তাহলে আমাদের অনিবার্যভাবেই মানতে হবে মহান আল্লাহর ঐশী বিধান। অনুসরণ করতে হবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দেখিয়ে যাওয়া আলোকিত পথ। অন্যায় হত্যা রোধ করে প্রতিষ্ঠা করতে হবে মানুষের জীবনাধিকার।

লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক

আজ পবিত্র মক্কা-মদিনায় জুমা পড়াবেন যাঁরা

রমজানের প্রস্তুতি শুরু হোক রজব মাস থেকেই

নতুন বছরে মুমিনের আত্মসমালোচনা

দক্ষিণ ভারতের প্রাচীনতম ৩ মসজিদ

মুসলিম নারীর সৌন্দর্যচর্চায় হালাল নেলপলিশ

আজকের নামাজের সময়সূচি: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫

তারেক রহমানের পোস্টে সুরা আলে ইমরানের ২৬ নম্বর আয়াত

সফর শেষে নিজ দেশে ফিরে যে আমল করতেন নবীজি

অতিথিকে যেভাবে সম্মান করতে বলেছেন নবীজি (সা.)

যেসব দোয়ায় রয়েছে পরকালীন মুক্তি ও অসামান্য সওয়াব