নবী ইবরাহিম (আ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত স্থানে ‘লাব্বাইক’ ধ্বনি তুলে আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেওয়ার নাম হজ। হৃদয়ে প্রভুর প্রেমে ব্যাকুলতা তৈরি করা ইবাদতের নাম হজ। বায়তুল্লাহয় তাওয়াফ, হাজরে আসওয়াদে চুমু, সাফা-মারওয়ায় সায়ি, মিনায় রাতযাপন, আরাফাতে অবস্থান, জমজমের ছোঁয়ায় পিপাসা মেটানো—এ যেন ভিন্ন এক সমীরণ। মদিনায় প্রিয় নবী (সা.)-এর পবিত্র রওজার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁকে সালাম দেওয়ার যে অনুভূতি, তা কি কোটি শব্দে লিখে প্রকাশ করার মতো!
পবিত্র হজ সম্পন্নের পর আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রেমে ভেজা থাকে হৃদয়জমিন। সেই উর্বর জমিনে ইমানের চাষ করতে অনেকে মক্কা ও মদিনার আশপাশে ঐতিহাসিক ইসলামি স্থান-স্থাপত্য পরিদর্শনে যান। মহানবী (সা.) ও তাঁর সাহাবিদের স্মৃতিবিজড়িত সেই স্থান ইমানের সবুজ চারায় সিঞ্চিত করে বেহেশতি জল।
পবিত্র নগরী মক্কার সন্নিকটে রয়েছে ঐতিহাসিক জাবালে নুর বা নুর পর্বত। জাবালে নুরের আকৃতি অনেকটা উটের কুঁজের মতো—এটি তাকে এক আকর্ষণীয় স্থাপত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই পর্বতের ‘হেরা’ গুহাতেই নবীজি (সা.)-এর ওপর প্রথম পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছিল। ‘ইকরা বিসমি রাব্বি কাল্লাজি খালাক’ ধ্বনি আলো ছড়িয়েছিল জাবালে নুরে। সেই আলো এখনো কোটি মানুষের হিদায়েতের মাধ্যম হচ্ছে।
জাবালে নুরে দাঁড়ানোর পর যখন হাজিদের মনে জাগে—এখানেই প্রথম পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছিল, তখন অনেকে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। অনেকে নয়নের জলে বুক ভাসান। নবীর যুগে ফিরে যেতে চান অনেকে। এ যেন এক আধ্যাত্মিক জাগরণ।
মসজিদুল হারাম থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে রয়েছে জাবালে সাওর বা সাওর পর্বত। এই পর্বতও নবীপ্রেমিকদের জন্য এক আবেগের স্থান। মক্কার কাফিররা মহানবী (সা.)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র করলে আল্লাহর আদেশে মাতৃভূমি মক্কা ছেড়ে হিজরতের উদ্দেশ্যে মদিনার পথ ধরেন তিনি। হিজরতের শুরুতে তিনি আশ্রয় নেন সাওর পর্বতের গুহায়। সঙ্গে ছিলেন হজরত আবু বকর। মহান আল্লাহর ইচ্ছায় সাওর পর্বতের সেই গুহার মুখে কবুতর বাসা বাঁধে। জাল বোনে মাকড়সা। পিছু নেওয়া কাফিররা যেন কোনোভাবেই বুঝতে না পারে মহানবী এখানে আশ্রয় নিয়েছেন, সে জন্যই ছিল এই আয়োজন। সাওর পর্বতে আজও দেখা যায় সেই কবুতরের বংশধরদের। অনেক হাজি তাদের জন্য খাবার নিয়ে যান। মনের মাধুরী মিশিয়ে সেই কবুতরগুলোকে খাবার বিলিয়ে দেন তাঁরা।
মসজিদুল হারামের সবচেয়ে কাছের পর্বতটির নাম জাবালে আবু কুবাইস। এটি পৃথিবীর প্রথম পর্বত। এ পর্বত থেকে অল্প দূরেই অবস্থিত জান্নাতুল মুআল্লা, যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত মহানবী (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, দাদা আবদুল মুত্তালিবসহ তাঁর অনেক আত্মীয়। মক্কার বাইরে রয়েছে মসজিদে আকাবা বা আল-বাইআ মসজিদ, যেখানে মদিনার আনসার সাহাবিরা প্রিয় নবী (সা.)-এর হিজরতের আগে তাঁর কাছে আনুগত্যের শপথ করেছিলেন।
এ ছাড়া হাজিরা মদিনা সফরের সময় মসজিদে নববি, বদর প্রান্তর, ওহুদ পাহাড়, মসজিদে কুবা, মসজিদে কিবলাতাইনসহ অনেক ঐতিহাসিক ইসলামি স্থান-স্থাপত্য দেখে হৃদয় জুড়ান। মনের ডানায় ভর করে অনুভব করেন নবীর যুগের সেই শীতলতা।
তথ্যসূত্র: আরব নিউজ