ইসলামের ইতিহাসে রবিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। এ মাসেই প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) দুনিয়ায় আগমন করেন। তাঁর আগমন শুধু আরব উপদ্বীপ নয়, গোটা মানবজাতির জন্য ছিল রহমত ও নুরের সঞ্চার। তাই রবিউল আউয়ালকে বলা হয় রহমতের মাস, নুরের মাস।
অন্যদিকে শুক্রবার বা জুমা হলো সপ্তাহের সেরা দিন। আল্লাহর কাছে এর মর্যাদা এত বেশি যে, এ দিনেই বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ফলে রবিউল আউয়ালের প্রতিটি জুমা মুসলিম হৃদয়ে বিশেষ আবেগ সৃষ্টি করে। বিশেষত তৃতীয় জুমা মুসলমানদের জন্য নবীপ্রেম, সুন্নাহ চর্চা ও ইবাদতে মনোযোগী হওয়ার অনন্য সুযোগ।
রবিউল আউয়াল ও নবীপ্রেম
মুসলমানদের হৃদয়ে নবীপ্রেমই ইমানের প্রাণ। নবী (সা.)-কে ভালোবাসা ছাড়া ইমান পূর্ণ হয় না। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ, যে আল্লাহ ও পরকাল কামনা করে এবং অধিক পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করে।’ (সুরা আহজাব: ২১)।
রবিউল আউয়ালের প্রতিটি দিন মুসলমানদের মনে নবীপ্রেম জাগিয়ে তোলে। এ মাসে সিরাত মাহফিল হয়, নবীজির জীবন আলোচনা হয়, দরুদ পাঠ বাড়ে এবং মানুষ তাঁর আদর্শ অনুসরণের প্রতিজ্ঞা করে। বিশেষ করে, তৃতীয় জুমায় মসজিদগুলোতে ভিড় বেড়ে যায়, মুসল্লিরা নবীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে দোয়া-মোনাজাতে লিপ্ত হন।
জুমার মাহাত্ম্য
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সূর্যোদয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হলো শুক্রবার। এ দিনেই আদম সৃষ্ট হয়েছেন, এ দিনেই জান্নাতে প্রবেশ করেছেন এবং এ দিনেই জান্নাত থেকে অবতরণ করেছেন। আর এ দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।’ (সহিহ্ মুসলিম)
শুক্রবার মুসলমানদের জন্য রহমতের দিন, দোয়া কবুলের দিন। এ দিনে এক বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে, যখন বান্দার দোয়া কবুল হয়। রবিউল আউয়ালে এ দিনের তাৎপর্য আরও বাড়ে, কারণ, নবীপ্রেম ও সুন্নাহ স্মরণের আবহ পুরো সমাজকে আচ্ছন্ন করে রাখে।
তৃতীয় জুমার তাৎপর্য
রবিউল আউয়ালের তৃতীয় জুমা মুসলমানদের কাছে এক অনন্য তাৎপর্য বহন করে—
আমাদের করণীয়
রবিউল আউয়াল মাসের প্রতিটি জুমাই বরকতময়, তবে তৃতীয় জুমা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এটি নবীপ্রেম, সুন্নাহ অনুসরণ ও ইবাদতের প্রতিজ্ঞা নবায়নের সময়। মুসলমানেরা যদি এ দিনের মর্যাদা উপলব্ধি করে আন্তরিকভাবে আমল করেন, তবে সমাজে শান্তি, ন্যায় ও আল্লাহর রহমত প্রতিষ্ঠিত হবে। রবিউল আউয়ালের এই আলো আমাদের অন্তরে নবীপ্রেম জাগিয়ে তুলুক এবং আমাদের জীবনকে সুন্নাহর আলোয় উদ্ভাসিত করুক—এটাই প্রার্থনা।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি