মানুষকে খুব সুন্দর ও আকর্ষণীয় আকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম অবয়বে।’ (সুরা তিন: ০৪)
সৃষ্টিজীবের মধ্যে সবচেয়ে নিখুঁত গঠনাকৃতির অধিকারী হলেন আমাদের মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। নবীজির দেহ মোবারক ছিল পূর্ণিমার চাঁদের চেয়েও চমৎকার। তিনি যখন হাসতেন, মনে হতো, পূর্ণিমার চাঁদ থেকে জোছনা ঝরছে আর আলোয় আলোয় পৃথিবীটা আলোকিত হয়ে উঠছে।
হজরত জাবের ইবনে সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি একবার পূর্ণিমা রাতের স্নিগ্ধ আলোয় রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে লাল চাদর ও লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় দেখলাম। আমি তখন একবার চাঁদের দিকে আরেকবার নবীজির দিকে তাকাতে থাকলাম। মনে হলো, তিনি আমার নিকট পূর্ণিমা চাঁদের চেয়েও অধিকতর সুন্দর।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৭৩৮৩)
নবীজি (সা.) ছিলেন মধ্যম আকৃতির মানানসই পুরুষ। মাথার চুল ছিল পুরোপুরি সোজা এবং অতিরিক্ত কোঁকড়ানোর মাঝামাঝি। দাড়ি মোবারক ঘন কালো ও সন্নিবেশিত। মুখমণ্ডল পূর্ণিমা চাঁদের মতো গোলাকার। চোখদুটো দীর্ঘ পলকবিশিষ্ট সুরমা সুশোভিত। চোখের মণি কুচকুচে কালো আর সাদা অংশ রক্তিমাভ সাদা।
দাঁতগুলো মুক্তোদানার ন্যায় শুভ্র ও ঝকঝকে। দাঁতের মাঝখানে হালকা ফাঁকা। গ্রীবা উজ্জ্বল পরিচ্ছন্ন। ললাট প্রশস্ত ও নাক সমুন্নত। ভ্রু যুগল ধনুকের মতো বাঁকা। হাত দুটো কোমল ও মোলায়েম। হাতের তালু কিছুটা প্রশস্ত। আঙুলগুলো বড়সড়।
তিনি ছিলেন সুমিষ্ট ও স্বল্পভাষী। কণ্ঠস্বর ছিল গাম্ভীর্যমিশ্রিত। ঠোঁট দুটো যেন গোলাপের পাপড়ি। কথামালা খুব দীর্ঘ কিংবা অতিশয় সংক্ষিপ্ত হতো না। কথনভঙ্গি খুবই আকর্ষণীয়। মনে হতো, কথা থেকে মুক্তো ঝরছে।
গায়ের রং ছিল উজ্জ্বল, চমৎকার ও ঝকঝকে। যেন গোলাপি ও বাদামের রং মিশ্রিত। শরীরের ঘাম যেন স্বচ্ছ স্ফটিক। তা থেকে মেশকের ন্যায় সুঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ত।
বুক হতে নাভি পর্যন্ত পশমের একটা সরু রেখা প্রলম্বিত। পায়ের গোড়ালি স্বল্প মাংসল। হাঁটলে মনে হতো কোনো উঁচু স্থান হতে নিচে অবতরণ করছেন।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।