যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনকে ঘিরে থাকা সরকারি নথিগুলো প্রকাশের বিল পাস করেছে। এতে করে সেই নথিপত্র প্রকাশের পথ খুলে গেল। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদ ৪২৭–১ ভোটে বিলটি অনুমোদন করে। এরপর সিনেট বিলটি আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠানোর আগেই সর্বসম্মত সম্মতিতে পাস করতে রাজি হয়।
বিলটি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টেবিলে যাবে। তিনি বলেছেন, তিনি বিলটিতে সই করবেন।
এপস্টেইনের মামলা যুক্তরাষ্ট্রে বহু বছর ধরে আলোচনার কেন্দ্র। কিশোরী ও তরুণী নারীদের যৌন নির্যাতনকারী এই অর্থলগ্নিকারীর সঙ্গে মিডিয়া, রাজনীতি ও শিক্ষাজগতের বহু প্রভাবশালী ব্যক্তির যোগাযোগ ছিল, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও আছেন।
ট্রাম্প প্রথমে নথি প্রকাশে আপত্তি জানিয়েছিলেন। এপস্টেইনকে ঘিরে বিতর্ককে তিনি ‘প্রহসন’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। পরে চলতি মাসে অবস্থান পাল্টান।
তবে নথি প্রকাশে কংগ্রেসের আইন পাস হওয়া আসলে জরুরি ছিল না। প্রেসিডেন্ট ও তাঁর ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস চাইলে নিজেরাই নথিগুলো প্রকাশ করতে পারতেন।
মঙ্গলবারের ভোটের আগে বিলের নেতৃত্ব দেওয়া কংগ্রেস সদস্য রো খন্না, থমাস ম্যাসি ও মার্জোরি টেলর গ্রিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলের সামনে এপস্টেইনের সঙ্গে জড়িত অবমাননার শিকার কয়েকজন বেঁচে থাকা ভুক্তভোগীর সঙ্গে বক্তব্য দেন।
থমাস ম্যাসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই জয় পেতে আমাদের প্রেসিডেন্ট, অ্যাটর্নি জেনারেল, এফবিআই ডিরেক্টর, হাউস স্পিকার আর ভাইস প্রেসিডেন্ট—সবার সঙ্গে লড়তে হয়েছে। আজ তাঁরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাই তাঁদের কিছু কৃতিত্ব প্রাপ্য।’
ভুক্তভোগীদের একজন, জেনা-লিসা জোনস তাঁর ১৪ বছর বয়সী একটি ছবি তুলে ধরেন। সে বয়সেই তিনি এপস্টেইনের সঙ্গে পরিচিত হন। তিনি বলেন, ‘আমি তখন শিশু ছিলাম। নবম শ্রেণিতে পড়তাম। জীবন আর ভবিষ্যৎ নিয়ে আশায় ভরা ছিলাম। সে আমার কাছ থেকে অনেক কিছু ছিনিয়ে নিয়েছে।’
২০০৮ সালে অপ্রাপ্তবয়স্ককে নিয়ে দেহব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে এপস্টেইন প্রথম দোষ স্বীকার করেন। তিনি ১৩ মাস একটি ন্যূনতম নিরাপত্তার কারাগারে ছিলেন, যেখানে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা বাইরে গিয়ে কাজ করার অনুমতি পেতেন। সমালোচকেরা বলেছিলেন, তাঁর শাস্তি অপরাধের তুলনায় ছিল নগণ্য।
মায়ামি হেরাল্ড মামলাটি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করলে ফেডারেল কর্তৃপক্ষ নতুন করে তদন্ত শুরু করে। ২০১৯ সালে তাঁকে গ্রেপ্তার করে নাবালিকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়। দুই মাস পর নিউ ইয়র্কের জেলে তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায়। মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলা হয়।
বিগত বছরগুলোতে এপস্টেইনের সঙ্গে যাঁদের যোগাযোগ ছিল তাঁদের মধ্যে ছিলেন ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক, যুক্তরাজ্যের প্রিন্স অ্যান্ড্রু এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন।
প্রথম দণ্ডের পরও এপস্টেইন সমাজের শক্তিশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট ল্যারি সামার্স সম্প্রতি এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।