ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের গাজা অঞ্চলের প্রধান খলিল আল-হাইয়া গতকাল শনিবার বলেছেন, ইসরায়েলি দখলদারত্ব শেষ হলে তাঁর গোষ্ঠী অস্ত্র ত্যাগ করবে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই অবস্থান তুলে ধরেন।
খলিল আল-হাইয়া বলেন, ‘আমাদের অস্ত্র দখলদারত্ব ও আগ্রাসনের উপস্থিতির সঙ্গে জড়িত। দখলদারত্ব মিটে গেলেই এই অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে রাষ্ট্রের হাতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অস্ত্রের বিষয়টি এখনো বিভিন্ন উপগোষ্ঠী ও মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনায় রয়েছে এবং চুক্তিটি এখনো একেবারে প্রাথমিক স্তরে আছে।’
সাক্ষাৎকারকালে আল-হাইয়া এটাও উল্লেখ করেন, ‘ইসরায়েলি দখলদারদের কিছু বন্দীর লাশের খোঁজে রোববার নতুন এলাকায় প্রবেশ করা হবে।’ অক্টোবরের ১০ তারিখ থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির সময় গাজার মানবিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে আল-হাইয়া অভিযোগ করে বলেন, ইসরায়েল ‘গাজায় প্রয়োজনীয় সামগ্রীর প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, যেন আমরা এখনো যুদ্ধের মধ্যে আছি।’
হামাসের এই নেতা বলেন, ‘গাজা ভূখণ্ডে যে পরিমাণ সাহায্য ঢুকছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট নই, আমরা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছি।’ স্মরণ রাখা দরকার, হামাস এর আগে অস্ত্র ছাড়তে অস্বীকার করে একে একটি ‘রেডলাইন বা চূড়ান্ত সীমা’ বলে উল্লেখ করেছিল। অন্যদিকে ইসরায়েল গাজায় হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি উপগোষ্ঠীর নিরস্ত্রীকরণকেই গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপের একটি প্রধান শর্ত বলে জোর দিচ্ছে।
এদিকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি সতর্ক করে বলেছেন, গাজার যুদ্ধবিরতি এক ‘নাজুক মুহূর্তে’ এসে পৌঁছেছে এবং স্থায়ী শান্তির দিকে দ্রুত অগ্রগতি না হলে এটি ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। দোহা ফোরামে বক্তৃতাকালে কাতারের প্রধানমন্ত্রী জানান, স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলি বাহিনীর গাজা থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য স্থিতিশীলতা ও চলাফেরার স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।
এই সতর্কবার্তা মিসর, কাতার, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তির ভঙ্গুরতাও তুলে ধরে। যদিও এই যুদ্ধবিরতি প্রথমে লড়াই থামিয়েছিল, কিন্তু হামাসের নিরস্ত্রীকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ মতপার্থক্যের কারণে এর দ্বিতীয় ধাপের বাস্তবায়ন থমকে গেছে।
নভেম্বরে জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরায়েল তার অবস্থান থেকে সরে আসবে এবং গাজা পরিচালিত হবে ‘বোর্ড অব পিস’ নামে একটি অন্তর্বর্তী শাসনকাঠামোর মাধ্যমে। এই পরিকল্পনায় একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের কথাও বলা হয়েছে।
তবে সেই কাঠামোর রূপরেখা এখনো অনিশ্চিত। তাত্ত্বিকভাবে মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বোর্ডের প্রধান হিসেবে থাকার কথা থাকলেও অন্য সদস্যদের পরিচয় এখনো ঘোষণা করা হয়নি। উপরন্তু খবর আছে যে আরব এবং মুসলিম দেশগুলো স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়ে দ্বিধা প্রকাশ করেছে। কারণ, তাদের ভয়, এটি ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়ে যেতে পারে।