হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

ইসরায়েলের অস্ত্র মেলায় ইউরোপ-এশিয়ার ক্রেতাদের ভিড়, বিজ্ঞাপনে গাজা যুদ্ধ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

ইসরায়েলের অস্ত্র মেলায় এমন সব দেশের প্রতিনিধিরা গেছেন যারা প্রকাশ্যে দেশটির সমালোচনা করেন। ছবি: এএফপি

গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর অব্যাহত সামরিক হামলার কৌশলকে তুলে ধরে অস্ত্র বিক্রির নজিরবিহীন উদ্যোগ নিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলো। গত সোম ও মঙ্গলবার তেল আবিবে অনুষ্ঠিত ‘ইসরায়েল ডিফেন্স টেক উইক’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে ইউরোপ ও এশিয়ার কয়েক ডজন দেশের সামরিক প্রতিনিধিদের কাছে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম প্রদর্শন করা হয়।

তেল আবিব ইউনিভার্সিটি এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত এই ইভেন্টটিতে অংশগ্রহণকারী ছিল ২ হাজারের বেশি। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশের সামরিক ও সরকারি প্রতিনিধিরাও ছিলেন। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রদর্শনীতে অন্তত একটি ভিডিও দেখানো হয়, যেখানে গাজার একটি ভবনে দুটি ইসরায়েলি ড্রোন আঘাত হানার পর ধ্বংসের চিত্র দেখা যায়। অর্থাৎ, গাজা যুদ্ধে এই অস্ত্রগুলোর কার্যকারিতাকেই মূল বিজ্ঞাপন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

চলমান গাজা সংঘাতের পটভূমিতে এই অস্ত্র প্রদর্শনী আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় যে সামরিক অভিযান শুরু করে, তাতে এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার ১০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অসংখ্য মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, বিশ্বনেতা ও জাতিসংঘ এই যুদ্ধকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছে। ইসরায়েলি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে এখনো প্রতিদিন মানুষ মারছে।

তবে এসব আন্তর্জাতিক নিন্দা সত্ত্বেও প্রদর্শনীতে উজবেকিস্তান, সিঙ্গাপুর ও ভারতের মতো এশীয় দেশগুলোর পাশাপাশি ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। যদিও এসব দেশের অনেকগুলোই প্রকাশ্যে ইসরায়েলের নিন্দা করে। তাদের এই অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে থাকা ইউরোপীয় দেশগুলোর দ্বিচারিতাকেও উন্মোচিত করেছে।

যুক্তরাজ্য সরকার গাজায় চলমান হামলার কারণে লন্ডনে অনুষ্ঠেয় দেশের শীর্ষস্থানীয় অস্ত্র প্রদর্শনীতে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের যোগদানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। অথচ গত সপ্তাহে ব্রিটিশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা তেল আবিবের এই প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন এবং গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় ব্যবহৃত সামরিক প্রযুক্তি খতিয়ে দেখেন। ব্রিটিশ দূতাবাস তাদের কর্মকর্তাদের উপস্থিতির বিষয়টি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে নিশ্চিত করেছে।

আরেকটি উদাহরণ হলো নরওয়ে। গত আগস্টে নরওয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরায়েলি ব্যাংক ও আমেরিকান নির্মাণ সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক ক্যাটারপিলার ইনকরপোরেশন থেকে বিনিয়োগ তুলে নেয়। নরওয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন বিশ্বের বৃহত্তম সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের (১.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার) কার্যনির্বাহী বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ক্যাটারপিলারের মতো সংস্থাগুলো ‘যুদ্ধ ও সংঘাত পরিস্থিতিতে মানুষের অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনে অবদান রাখছে’। তবুও নরওয়ের সরকারি কর্মকর্তারা এই অস্ত্র প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন।

গাজা যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছে। জুন মাসে প্রকাশিত মার্কিন জরিপ সংস্থা পিউ রিসার্চের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইতালি থেকে জাপান পর্যন্ত বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষের এখন ইসরায়েল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। আমেরিকাতেও, বিশেষ করে তরুণ রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি বিরূপ মনোভাব বাড়ছে।

তবে সরকার পর্যায়ে এই জনপ্রিয়তার পতন অস্ত্র বিক্রিতে কোনো প্রভাব ফেলেনি। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশটির অস্ত্র রপ্তানি সর্বকালের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে, যার মূল্যমান ১৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। মন্ত্রণালয় জুনে এক বিবৃতিতে জানায়, গাজা যুদ্ধের ‘অর্জন’ এই চাহিদা বাড়াতে সহায়তা করেছে।

গত বছর মোট রপ্তানির ৫৪ শতাংশই কিনেছে ইউরোপীয় দেশগুলো। এ ছাড়া, আব্রাহাম অ্যাকর্ডস স্বাক্ষরকারী আরব দেশগুলোতেও বিক্রি বেড়েছে, যা ২০২৩ সালের ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে গত বছর ১২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

সাম্প্রতিক মেগা-ডিলগুলোর মধ্যে রয়েছে জার্মানির সঙ্গে অ্যারো ৩ দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ৪ বিলিয়ন ইউরোর (৪.৬ বিলিয়ন ডলার) চুক্তি। ইসরায়েলের ইতিহাসে বৃহত্তম প্রতিরক্ষা রপ্তানি চুক্তি এটি। এ ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো ইসরায়েল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র কিনছে। জুলাই মাসে রোমানিয়া ইসরায়েলের রাফায়েল থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার ঘোষণা দেয়। এমনকি গ্রিসও তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনার অজুহাতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ঐতিহাসিক নৈকট্য থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলের সামরিক সরঞ্জাম কিনছে। গ্রিক পার্লামেন্ট সম্প্রতি ইসরায়েলের কাছ থেকে ৭৫০ মিলিয়ন ডলারের ৩৬টি পিইউএলএস রকেট আর্টিলারি সিস্টেম কেনার অনুমোদন দিয়েছে।

হিজাব ছাড়াই ম্যারাথনে দৌড়ালেন নারীরা—ইরানে ২ আয়োজক গ্রেপ্তার

ইসরায়েলি দখলদারত্ব শেষ হলেই অস্ত্র পরিত্যাগ করবে হামাস

ইসরায়েলকে সরতে বলল কাতার-মিসর-তুরস্ক ও সৌদি, আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের আহ্বান

গাজায় ইসরায়েলি চর শাবাবকে যেভাবে হত্যা করা হয়, ফিলিস্তিনে উল্লাস

গাজা গণহত্যা থেকে মনোযোগ সরাতে আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়াচ্ছে ইসরায়েল: আল–শারা

সিরিয়ায় নতুন বিদ্রোহের প্রস্তুতি—নেপথ্যে আসাদের নির্বাসিত গোয়েন্দাপ্রধান ও চাচাতো ভাই

গাজায় হামাসবিরোধী ইসরায়েলি প্রক্সি গোষ্ঠীর নেতা ইয়াসির আবু শাবাব নিহত, কে তিনি

গাজায় যুদ্ধবিরতি খুব ভালোভাবে চলছে, দ্বিতীয় ধাপ শুরু শিগগির: ট্রাম্প

মার্কিন মধ্যস্থতায় ৪০ বছরের মধ্যে প্রথমবার সরাসরি আলোচনায় লেবানন-ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের নেলসন ম্যান্ডেলা: বারঘৌতির মুক্তির দাবিতে সোচ্চার দুই শতাধিক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব