হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

ইসরায়েলের হামলা ও হুমকিতে টনক নড়ল আল-শারার, দ্রুজদের সুরক্ষার আশ্বাস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। ছবি: সংগৃহীত

সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা বলেছেন, দ্রুজ নাগরিকদের সুরক্ষা তাঁর ‘অগ্রাধিকার’। তিনি এমন সময়ে এই মন্তব্য করলেন, যখন সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চল সুয়েইদা প্রদেশে দ্রুজ সংখ্যালঘুদের ওপর সরকারি বাহিনী কর্তৃক হত্যা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। আর এই হামলার জবাবে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীকে ‘ধ্বংস’ করার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। এর আগে ইসরায়েল হুমকি দেয়, যদি সিরিয়ার সরকারি বাহিনীকে দেশের দক্ষিণাঞ্চল অর্থাৎ সুয়েইদা থেকে প্রত্যাহার করা না হয়, তাহলে তারা হামলা আরও বাড়াবে। ইসরায়েলের এই হুমকির এক দিন পর সুয়েইদা অঞ্চল থেকে সরকারি বাহিনীকে সরিয়ে নিয়েছে সিরিয়া।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার দামেস্কে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকালে জাতির উদ্দেশে প্রথম টেলিভিশনে ভাষণ দেন শারা। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধকে ভয় পাই না। তবে এ দেশের নাগরিক হিসেবে দ্রুজরাও সুরক্ষার অধিকার রাখে।’

এরপরই সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, দ্রুজ নেতাদের সঙ্গে একটি অস্ত্রবিরতির চুক্তির অংশ হিসেবে সেনাবাহিনী সুয়েইদা অঞ্চল থেকে সরে যাচ্ছে। তবে এই চুক্তি কতটা স্থায়ী হবে, তা অনিশ্চিত।

গত রোববার থেকে সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চল সুয়েইদায় দ্রুজ মিলিশিয়া ও বেদুইন গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে শুরু হওয়া সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই ৩৫০ জনের বেশি নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনার পর শারার সরকার প্রথমবারের মতো দ্রুজ অধ্যুষিত সুয়েইদা শহরে সেনা মোতায়েন করে। তবে সংঘর্ষ আরও তীব্র আকার ধারণ করে এবং সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে দ্রুজ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে।

দ্রুজ ধর্ম ‘শিয়া ইসলামের’ একটি শাখা, যাদের স্বতন্ত্র পরিচয় ও বিশ্বাস রয়েছে। সিরিয়া ছাড়াও লেবানন, জর্ডান, ইসরায়েল ও অধিকৃত গোলান মালভূমিতে দ্রুজ জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে।

অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার আগের জিহাদিসংশ্লিষ্টতার কারণে সিরিয়ার দ্রুজসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তাঁর ওপর বরাবরই সন্দেহ পোষণ করে আসছে। তাঁর দল হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) আগের আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং এখনো জাতিসংঘের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত।

সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় এই ভয় আরও বেড়েছে। এর মধ্যে মে মাসে দ্রুজ মিলিশিয়া, নিরাপত্তা বাহিনী ও ইসলামপন্থী যোদ্ধাদের মধ্যে একটি সংঘর্ষ হয়। যার ফলে ইসরায়েল সামরিক হস্তক্ষেপ করে।

আজকের ভাষণে শারা বলেন, ‘দ্রুজ সম্প্রদায় এই জাতির অঙ্গ এবং ঐক্যের প্রতীক। তাদের বাইরের কোনো শক্তির হাতে তুলে দেওয়ার প্রচেষ্টা আমরা প্রত্যাখ্যান করি।’ তিনি জানান, সুয়েইদায় মোতায়েন সরকারি বাহিনী স্থিতিশীলতা পুনঃস্থাপনে সফল হয়েছে এবং অবৈধ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে বিতাড়িত করেছে, তবে ইসরায়েলি হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে জটিল ও উত্তপ্ত করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধকে ভয় পাই না। বরং আমরা আমাদের জাতির স্বার্থে বিশৃঙ্খলা ও ধ্বংসের বিরুদ্ধে লড়াই করি।’

সুয়েইদায় নিরাপত্তার দায়িত্ব এখন স্থানীয় ধর্মীয় নেতা ও নির্বাচিত স্থানীয় গোষ্ঠীর হাতে ন্যস্ত করা হবে বলে তিনি জানান। শারা তাঁর ভাষণ শেষ করেন এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে, ‘যারা দ্রুজ জনগণের ক্ষতি করেছে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।’

অন্যদিকে গতকাল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশটির দ্রুজ নাগরিকদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনী আমাদের দ্রুজ ভাইদের রক্ষার জন্য এবং সিরিয়ার সরকার-সমর্থিত গ্যাংগুলোকে ধ্বংস করার জন্য কাজ করছে।’

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, তারা দামেস্কে সিরিয়ার সেনাসদর দপ্তর, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছে একটি সামরিক স্থাপনা, সুয়েইদার দিকে এগিয়ে যাওয়া সাঁজোয়া যান এবং দক্ষিণ সিরিয়ায় অস্ত্রের গুদাম লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে।

সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এয়াল জামির বলেন, ‘আমরা সীমান্তের ওপারে শত্রুদের শক্তিশালী হতে দেব না। আমরা ইসরায়েলের নাগরিকদের রক্ষা করব এবং দ্রুজ বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি হতে দেব না। সীমান্তের আশপাশে বিশৃঙ্খলার কোনো স্থান নেই।’

এই পরিস্থিতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, তাঁরা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলছেন এবং একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের জন্য নির্দিষ্ট পদক্ষেপে সম্মত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এই সংকটের অবসানে প্রতিটি পক্ষকে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে এবং আমরা প্রত্যাশা করি, তারা তা করবে।’ তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, গত রোববার থেকে সংঘর্ষে অন্তত ৩৫০ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে ৭৯ জন দ্রুজ যোদ্ধা, ৫৫ জন বেসামরিক, যাদের মধ্যে ২৭ জনকে স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাহিনী নির্বিচারে হত্যা করেছে বলে সংগঠনটি দাবি করেছে। এ ছাড়া সরকারি বাহিনীর ১৮৯ জন সদস্য এবং ১৮ জন বেদুইন গোষ্ঠীর যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে তারা জানিয়েছে। তবে এসওএইচআর এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করেনি। সিরিয়ার নিরাপত্তা সূত্রও জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ৩০০-এর কাছাকাছি।

গাজায় হামাসবিরোধী ইসরায়েলি প্রক্সি গোষ্ঠীর নেতা ইয়াসির আবু শাবাব নিহত, কে তিনি

গাজায় যুদ্ধবিরতি খুব ভালোভাবে চলছে, দ্বিতীয় ধাপ শুরু শিগগির: ট্রাম্প

মার্কিন মধ্যস্থতায় ৪০ বছরের মধ্যে প্রথমবার সরাসরি আলোচনায় লেবানন-ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের নেলসন ম্যান্ডেলা: বারঘৌতির মুক্তির দাবিতে সোচ্চার দুই শতাধিক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব

‘সর্বত্র ভূত দেখে’ যত্রতত্র ‘বোমা ফেলছেন বিবি’, লাগাম টানতে ব্যর্থ যুক্তরাষ্ট্র

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রই একমাত্র সমাধান—পোপ

দুর্নীতির মামলায় প্রেসিডেন্টের কাছে নেতানিয়াহুর ক্ষমা প্রার্থনা

গাজার পুলিশ বাহিনী গঠনে হাজারো ফিলিস্তিনিকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে মিসর

যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজায় ইসরায়েলি হামলা চলছে, নিহত ৭০ হাজার ছাড়াল

সংঘবদ্ধ নির্যাতন ‘কার্যত’ ইসরায়েলের রাষ্ট্রনীতি, কুকুর হামলা, যৌন নির্যাতনের চিত্র জাতিসংঘের প্রতিবেদনে