হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

কোন শর্তে যুদ্ধবিরতিতে হিজবুল্লাহ–ইসরায়েল, গাজায় সংঘাতের অবসান কবে

গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা সংঘাতে সাময়িক বিরতি দিল হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল। ছবি: এএফপি

ইসরায়েল এবং লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সব পক্ষ ঐকমত্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

এই চুক্তির মাধ্যমে পরস্পরের সীমানার ভেতরে আক্রমণ বন্ধ এবং ইসরায়েলি সেনাদের লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ বন্ধ হবে। গত বছরের অক্টোবর থেকে এই যুদ্ধ চলছে।

হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে সর্বশেষ এই যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর। হামাসের দক্ষিণ ইসরায়েল আক্রমণের এক দিন পর হিজবুল্লাহ ইসরায়েলে আক্রমণ শুরু করে।

এই সংঘর্ষ গত সেপ্টেম্বরে ব্যাপক আকার ধারণ করে। লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলা শুরু হয়। শিগগিরই দক্ষিণ লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।

এই যুদ্ধবিরতির মানে কী?

হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি স্থানীয় সময় বুধবার ভোর ৪টা থেকে কার্যকর হয়েছে।

এটি কার্যকর হওয়ার পর ৬০ দিনের একটি অন্তর্বর্তী সময় থাকবে, এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি সেনারা এবং হিজবুল্লাহ সেনারা উভয়ই যথাক্রমে ইসরায়েলি সীমান্তের উত্তর এবং লিতানি নদীর দক্ষিণের এলাকা ত্যাগ করবে।

যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছিলেন, চুক্তি অনুযায়ী সীমান্তে বসবাসকারী উভয় দেশের লাখ লাখ শরণার্থী তাঁদের বাড়িতে ফিরতে পারবে। এটি ছিল হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।

এদিকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, ইসরায়েলি আক্রমণে লেবাননে অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছে। যুদ্ধবিরতির ঠিক আগেই ইসরায়েল সামরিক অভিযান বাড়িয়েছে।

হিজবুল্লাহ হাজার হাজার রকেট ইসরায়েলি সেনা ঘাঁটি ও শহরে ছুড়েছে। এর মধ্যে গত রোববার প্রায় ২৫০টি রকেট ছুড়েছিল হিজবুল্লাহ।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় ৩ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে এবং ১২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কমপক্ষে ৭৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, এর মধ্যে প্রায় ৫০ জন ইসরায়েলি সেনা সদস্য লেবাননে স্থল আক্রমণে নিহত হয়েছেন।

যুদ্ধবিরতির শর্তাবলি কী?

প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, যুদ্ধবিরতির এই পদক্ষেপ ‘স্থায়ী শত্রুতার অবসান’ আনার উদ্দেশ্যেই নেওয়া হয়েছে।

চুক্তির পূর্ণ শর্তাবলি এখনো জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়নি, তবে প্রধান শর্তগুলো হলো:

-উভয় পক্ষের রকেট হামলা, বিমান হামলা এবং অন্যান্য সামরিক কার্যক্রম বন্ধ হবে।

-ইসরায়েলি সেনারা লিতানি নদীর দক্ষিণ এবং ইসরায়েলি সীমান্তের উত্তরের এলাকা থেকে প্রত্যাহার হবে।

-হিজবুল্লাহও একই এলাকা থেকে প্রত্যাহার হবে এবং তাদের অবকাঠামো পুনর্গঠন না করার প্রতিশ্রুতি দেবে।

-হিজবুল্লাহ এখনো তার চুক্তি শেষ করার জন্য কোনো জনসমক্ষে বিবৃতি দেয়নি, তবে বাইডেন বলেছেন, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একমত হয়েছে।

গাজায় যুদ্ধবিরতির কী প্রভাব পড়বে?

যদিও এই যুদ্ধবিরতি ইসরায়েল–লেবানন সীমান্তে সংঘর্ষ বন্ধ করবে, তবে গাজার যুদ্ধের শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই।

হামাস এবং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে লড়াই গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর থেকে অব্যাহত রয়েছে। অক্টোবরের হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫০ জন জিম্মি হন।

এরপর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের মতে, প্রায় ৪৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

এই সংঘাত গাজার মানবিক সংকট তৈরি করেছে। দুর্ভিক্ষ ও অনাহারের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড ‘জাতিগত নিধনের লক্ষণ’ বহন করছে।

কাতার চলতি মাসের শুরুতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেকে প্রত্যাহার করার পর গাজা ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

তবে জো বাইডেন বলেছেন, তাঁর পরবর্তী লক্ষ্য গাজায় যুদ্ধবিরতি অর্জন করা এবং বাকি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘আরেকটি পদক্ষেপ নেবে’ গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য। এ লক্ষ্যে ওয়াশিংটন তুরস্ক, মিশর, কাতার, ইসরায়েল এবং অন্যদের সঙ্গে কাজ করবে।

পুরোনো শত্রু, নতুন সংঘর্ষ

ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহ সংঘাত নতুন নয়। ২০০৬ সালে, দুই পক্ষ দুই মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছিল। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে সেই সংঘাত শেষ হয়।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ১৭০১ নম্বর প্রস্তাবের অধীনে, ইসরায়েল লেবানন থেকে তার সেনারা প্রত্যাহার করতে সম্মত হয়, যখন হিজবুল্লাহ তার বাহিনী লিতানি নদীর কাছ থেকে সরে যায়। এই নদী ইসরায়েল সীমান্ত থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার উত্তরে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স এই প্রস্তাবকে বর্তমান সংঘর্ষের অবসানের জন্য একটি কাঠামো হিসেবে ব্যবহার করতে চায়।

গত মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল চুক্তি বাস্তবায়ন করবে এবং ‘যেকোনো লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানানো হবে’।

নেতানিয়াহু বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পুরোপুরি সমন্বয়ের মাধ্যমে, আমাদের পূর্ণ সামরিক স্বাধীনতা রয়েছে। যদি হিজবুল্লাহ চুক্তি লঙ্ঘন করে বা অস্ত্রসম্ভার পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করে, আমরা তা কঠোরভাবে আক্রমণ করব।’

একজন সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে একটি ব্যবস্থার অধীনে কাজ করবে, যা লেবাননের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন রোধ করবে।

সূত্র: এবিসি

বৃষ্টি, বন্যা আর আবর্জনা: গাজাবাসীর অন্তহীন শীতের রাতের দুঃসহ বেদনা

গাজায় হামলা চালিয়ে হামাসের শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের

সিরিয়ায় আইএসের হামলায় দুই মার্কিন সেনা এবং এক দোভাষী নিহত

এবার ডিজেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করল ইরান, বাংলাদেশিসহ ১৮ ক্রু আটক

ইরানে দুইবার সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে ওয়াশিংটন: মার্কিন দূত

জানুয়ারিতেই হতে পারে গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন, সেনা প্রস্তুত করছে ইন্দোনেশিয়া

তীব্র শীতে গাজায় প্রাণ সংহারকারীর ভূমিকায় ‘বায়রন’, নিহত অন্তত ১৪

ইরানে নোবেলজয়ী নার্গিস মোহাম্মাদি গ্রেপ্তার

এবার গাজাবাসীর নতুন হুমকি ঘূর্ণিঝড় বায়রন, ঝুঁকিতে সাড়ে ৮ লাখ মানুষ

ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের শর্তে গাজায় এক দশকের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব হামাসের