হন্ডুরাসে চলছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ফল প্রকাশে দীর্ঘ বিলম্ব ও জালিয়াতির অভিযোগের মধ্যে লড়াইয়ে এগিয়ে আছেন মধ্যপন্থী লিবারেল পার্টির প্রার্থী সালভাদর নাসরাল্লা। তাঁর নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী নাসরি আসফুরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন পেয়েও লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়েছেন। যদিও তাঁদের মধ্যকার ব্যবধান বেশি নয়। অন্যদিকে শাসকপক্ষের প্রার্থী বামপন্থী লিব্রে পার্টির রিক্সি মনকাদা অনেকটাই পিছিয়ে আছেন।
নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৬৮% ভোট গণনা শেষে দেখা গেছে নাসরাল্লা পেয়েছেন ৪০.১৩% ভোট এবং আসফুরা পেয়েছেন ৩৯.৭১ %। এই দুইজনের মধ্যে ব্যবধান মাত্র ৯ হাজার ১২৯ ভোট। অথচ সোমবারের প্রাথমিক ফলাফলে আসফুরাই প্রায় ৫০০ ভোটে এগিয়ে ছিলেন। আর রিক্সি পেয়েছেন ১৯.০৯% ভোট।
ফল প্রকাশে বিলম্ব নিয়ে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সিস্টেমে সমস্যা হওয়ায় প্রায় ২০% ভোট গণনা করা যাচ্ছে না। এ সময় ট্রাম্প ভোট কারচুপির অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, ফলাফল পরিবর্তন হলে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
গত সোমবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ‘হন্ডুরাস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। যদি তারা তা করে, কঠোর মূল্য দিতে হবে! হন্ডুরাসের জনগণ ৩০ নভেম্বর বিপুল সংখ্যায় ভোট দিয়েছে।’
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নাসরাল্লা ও আসফুরা দুজনের ভোটই ৪০%-এর নিচে। দুজনের ভোট হাতে গণনা করতে হবে। গণনার তথ্য এখন থেকে সরাসরি গণমাধ্যমে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রকাশ করা হবে।
তারা আরও জানায়, প্রাথমিক দ্রুত গণনার সিস্টেমে সমস্যা হয়েছিল এবং তাদের ওয়েবসাইটও বেশিরভাগ সময় বন্ধ ছিল। এতে কারচুপির আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়।
হন্ডুরাসের নির্বাচনে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জিওমারা কাস্ত্রোর স্বামী সাবেক প্রেসিডেন্ট ম্যানুয়েল জেলায়া। তিনি এক্স প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, এটি মনকাদার নির্বাচনী প্রচেষ্টা রোধ করার একটি চেষ্টা। হন্ডুরাসের জনগণ গণতন্ত্র রক্ষায় দাঁড়াবে বলে আশা করছি।
তিনি আরও লেখেন, ‘আমরা যারা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করি, আমরা সক্রিয়। আমরা দেশপ্রেমিক এবং কেউ হার মানে না।’
সোমবার সন্ধ্যায় মনকাদা বলেন, নির্বাচন এখনো শেষ হয়নি। অন্য দলগুলো ভোট প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়াও নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের নিন্দা জানান তিনি।
এদিকে ভোট গণনার মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। মার্কিন ফেডারেল রেকর্ড বলছে, গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের একটি কারাগার থেকে মুক্তি পান হন্ডুরাসের জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডেন্ট হুয়ান অর্লান্ডো হার্নান্দেজ। মাদক পাচার ও অস্ত্র সংক্রান্ত অভিযোগে ৪৫ বছরের সাজা হয়েছিল তাঁর। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তাঁকে ক্ষমা করার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করে যে হার্নান্দেজকে ক্ষমা করা হয়েছে।
ট্রাম্প আসফুরার পক্ষ নিয়ে বলেন, মাদক পাচারের বিরুদ্ধে কাজ করবেন ৬৭ বছর বয়সী আসফুরা। এ সময় মনকাদাকে ‘কমিউনিস্ট’ বলে অভিহিত করেন তিনি। অন্যদিকে নাসরাল্লাকেও ‘বর্ডারলাইন কমিউনিস্ট বলে আখ্যা দেন তিনি।
তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন ৭২ বছর বয়সী টেলিভিশন উপস্থাপক নাসরাল্লা। প্রেসিডেন্ট কাস্ত্রোর অধীনে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এবার দুর্নীতি দমন ও আইনশৃঙ্খলা ফেরানোর অঙ্গীকার নিয়ে প্রেসিডেন্ট হতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন নাসরাল্লা।