আসামে অভিবাসী (আসাম থেকে বহিষ্কার) আইন-১৯৫০ প্রয়োগের প্রথম ঘটনা এটি। চলতি বছর রাজ্য মন্ত্রিসভা আইনটি কার্যকরের অনুমোদন দেওয়ার পর, এবার সোনিতপুর জেলার প্রশাসন পাঁচ ব্যক্তিকে ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ’ দিয়েছে। এর আগে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল তাঁদের বিদেশি হিসেবে ঘোষণা করেছিল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) এই নির্দেশ জারি করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা ‘পলাতক’ এবং তাঁদের অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। স্থানীয়দের দাবি, পরিবারগুলো এক দশকেরও বেশি সময় আগে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।
সোনিতপুরের ধবোকাটা গ্রামের চারজন নারী ও একজন পুরুষের বিরুদ্ধে এই নোটিশ জারি করা হয়। নোটিশটিতে সোনিতপুরের ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) আনন্দ কুমার দাস স্বাক্ষর করেন।
কর্মকর্তারা জানান, এই ব্যক্তিরা দুটি পরিবারের সদস্য এবং প্রায় দুই দশক আগে তাঁরা এই গ্রামে এসেছিলেন। সীমান্ত পুলিশ প্রথম ২০০৬ সালে তাঁদের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে (২) পাঠিয়েছিল। ট্রাইব্যুনাল চলতি বছর চূড়ান্ত রায়ে তাঁদের বিদেশি ঘোষণা করেন।
ডেপুটি কমিশনার আনন্দ কুমার দাস স্বাক্ষরিত নোটিশে উল্লেখ করা হয়, আসাম বা ভারতের ভেতরে তাঁদের উপস্থিতি ‘জনস্বার্থের জন্য ক্ষতিকর এবং রাজ্যের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ’।
নির্দেশে আরও বলা হয়, আদেশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই পাঁচ ব্যক্তিকে ‘ধুবরি/শ্রীরভূমি/দক্ষিণ সালমারা-মানকাচার রুট’ দিয়ে আসাম ও ভারত ত্যাগ করতে হবে। এই রুট বাংলাদেশে পৌঁছায়। নির্দেশ না মানলে সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
তবে বৃহস্পতিবার পুলিশ গ্রামে গিয়ে তাঁদের কোনো হদিস পায়নি। সোনিতপুরের সিনিয়র এসপি বরুণ পুরকায়স্থ বলেন, ‘তাঁরা পলাতক। কোথায় আছেন জানা যায়নি। খোঁজ চলছে, পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্থানীয়রা বলছেন, এই পরিবারগুলো বহু আগেই গ্রাম ছেড়েছিল। পাশের গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, ‘ওরা প্রায় ১৯-২০ বছর আগে এসেছিল। কিছুদিন পরই সন্দেহের কারণে সীমান্ত পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। এরপরই তারা গ্রাম ছেড়ে চলে যায়।’
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে রাজ্য মন্ত্রিসভা এই আইনের (১৯৫০ সালের অভিবাসী আইন) প্রয়োগপদ্ধতি অনুমোদন করে। এর মাধ্যমে সাত দশকেরও বেশি সময় পরে আইনটি পুনরায় সচল হলো।
পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন রোধে ১৯৫০ সালে কেন্দ্রীয় সরকার আসামের অনুরোধে আইনটি জারি করেছিল। আইনে বলা আছে—যেকোনো ব্যক্তি, যিনি ভারতের বাইরে বসবাস করতেন এবং আইন কার্যকর হওয়ার আগে বা পরে আসামে প্রবেশ করেছেন, তাঁদের উপস্থিতি জনস্বার্থ বা আসামের কোনো তফসিলি জনগোষ্ঠীর স্বার্থের পরিপন্থী হলে সরকার তাঁকে আগের দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিতে পারে।
সাধারণত ফেরত পাঠানোর (বহিষ্কার) প্রক্রিয়ায় দুই দেশের মধ্যে সমন্বয়, ব্যক্তির নাগরিকত্ব যাচাইসহ বিভিন্ন ধাপ থাকে। তবে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বক্তব্য, ১৯৫০ সালের আইন প্রয়োগের মাধ্যমে ‘কূটনৈতিক প্রক্রিয়া ছাড়াই’ বহিষ্কার কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয়।