বন্যায় ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন মহারাষ্ট্রের এক কৃষক। ঠিক এমন সময়ে একটি জনপ্রিয় টিভি শো বদলে দিয়েছে ওই কৃষকের জীবন। ছত্রপতি সম্ভাজিনগর জেলার পৈঠান শহরের কৃষক কৈলাস কুন্টেওয়ার অমিতাভ বচ্চনের জনপ্রিয় কুইজ শো ‘কৌন বানেগা ক্রোড়পতিতে’ (কেবিসি) ১৪টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে জিতেছেন ৫০ লাখ রুপি।
মাত্র দুই একর জমির মালিক কুন্টেওয়ার। সেখানেই তাঁর বাবা-মা, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন। বেশ কয়েক বছর ধরে ফসল নষ্ট, খরা, বন্যা ও নানা বিপর্যয়ের মধ্যে কঠিন জীবন যাপন করছিলেন কুন্টেওয়ার। প্রায়শই তাঁকে অন্যের জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হয়েছে। কিন্তু এই কঠিন বছরগুলোতেও একটি স্বপ্ন তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আর তা হলো—অমিতাভ বচ্চনের কেবিসির মঞ্চে পৌঁছানো।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে কুন্টেওয়ার বলেন, ‘৫০ লাখ টাকা জেতার আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমাদের মতো মানুষের কাছে এত বড় টাকার অঙ্ক শোনাও অবিশ্বাস্য মনে হয়।’
কুন্টেওয়ার জানান, কেবিসিতে পৌঁছানোর যাত্রা কয়েক বছর আগে শুরু হয়েছিল। ২০১৫ সালে কুন্টেওয়ার প্রথম মোবাইল ফোন কেনেন। এরপরই তিনি কেবিসির শো দেখতে শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি পড়াশোনায় ভালো ছিলাম এবং যা পড়তাম বা শুনতাম, তা মনে রাখার অভ্যাস ছিল। ২০১৫ সালে আমি একটি মোবাইল ফোন কিনি এবং ইউটিউবে কেবিসি পর্ব দেখা শুরু করি। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম এটি শুধু বিনোদনের জন্য। আমি ভাবিনি যে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে কেউ সত্যিই টাকা আয় করতে পারে।’
২০১৮ সালে কেবিসির একটি শোতে হিংগোলি জেলার একজন প্রতিযোগীকে দেখে কুন্টেওয়ারের ধারণা পাল্টে যায়। তিনি বলেন, ‘আমি তাঁকে ফেসবুকে খুঁজে বের করি, তাঁর নম্বর পাই এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলি। তিনি আমাকে বলেছিলেন, এটা সম্পূর্ণ সত্য। আপনার জ্ঞান থাকলে আপনি সত্যিই টাকা পেতে পারেন।’
তখন থেকে কুন্টেওয়ার নিজেকে শেখার জন্য উৎসর্গ করেন। তিনি বলেন, ‘জমিতে দীর্ঘ সময় শ্রম দেওয়ার পরেও আমি বাড়ি ফিরে অন্তত এক ঘণ্টা ইউটিউবে সাধারণ জ্ঞানের শো দেখতাম। আমি এটিকে অভ্যাসে পরিণত করি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই অনুশীলন আমাকে আজকের এই অবস্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।’
সাত বছরের এই অধ্যবসায়ের ফল অবশেষে এ বছর তিনি পেয়েছেন। কুন্টেওয়ার কেবিসির ‘হট সিটে’ পৌঁছান এবং ৫০ লাখ টাকা জেতেন।
পুরস্কারের অর্থ দিয়ে তিনি কী করার পরিকল্পনা করছেন—জানতে চাইলে কুন্টেওয়ার এনডিটিভিকে বলেন, ‘আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করব। আমাদের সন্তানদের শিক্ষাই সব সময় প্রধান অগ্রাধিকার থাকবে। সেটি নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা দেখব আর কী করা যায়।’ প্রতি মাসে মাত্র ৩ হাজার রুপি আয় করা কুন্টেওয়ার একজন ক্রিকেটভক্ত। তিনি তাঁর দুই ছেলেকে ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্ন দেখেন।