কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। কারও কাঁধে মাথা রেখে মন উজাড় করে কাঁদার মতোই কেউ নেই! এই দুঃস্বপ্নের চেয়ে মৃত্যুও তো ভালো!— কেঁদে কেঁদে বলছিলেন ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত একা নারী প্রমীলা।
ভারতের হিমাচল প্রদেশের সিমলায় ভয়াবহ ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের এমনই অসহায় অবস্থা এখন। সেখানে মানুষের দুর্দশা বর্ণনার অতীত।
গত ২৩ আগস্ট সকালে ভূমিধসে সরকারি কর্মচারীদের কোয়ার্টার প্রারি হাউস আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইন্দিরা গান্ধী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (আইজিএমসিএইচ) কাছে সেই কোয়ার্টারে অসুস্থ মাকে নিয়ে থাকতেন প্রমীলা।
আজ শুক্রবার তাঁর দুর্দশার বর্ণনা দিয়ে বার্তা সংস্থা পিটিআইকে প্রমীলা বলেন, ‘আমি আমার ৭৫ বছর বয়সী মায়ের সঙ্গে থাকি। তিনি জরায়ু ক্যানসারে ভুগছেন। ২০১৬ সাল থেকে চিকিৎসা চলছে। আমি একটি দোকানে সেলস গার্ল হিসেবে আমার চাকরিও হারিয়েছি। নগরীর বাজারে গত সপ্তাহে মন্দার কারণে কোনো ক্রেতা ছিল না। তাই আমার চাকরিটাও নেই।’
প্রমীলা বলেন, ‘আমি বৃহস্পতিবার রাতে আইজিএমসিএইচে ঘুমিয়েছিলাম। কারণ আমার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।’ প্রমীলার বাবা ও ভাই–বোন নেই। স্বামীর কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন।
দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন প্রমীলা। তিনি বলেন, ‘আমি এখন মরিয়া হয়ে একটি চাকরি খুঁজছি। আমার মায়ের চিকিৎসার জন্য টাকার খুব দরকার। দরকার হলে ঝাড়ুদার হতেও আমার আপত্তি নেই। এখন আমার যা আছে তা হলো একমাত্র আমার মা।’
প্রমীলার প্রতিবেশী সুমন বলেন, বাসা থেকে কোনো কিছুই উদ্ধার করতে পারেননি। এক কাপড়ে বেরিয়ে পড়েছেন। গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করা সুমন বলেন, ভূমিধসে সব হারিয়েছেন। ছেলের স্কুলের ফি দেওয়ার মতো টাকাও নেই। তাদের এখন কোনো আশ্রয় নেই, কাপড় নেই। এমনকি ভূমিধসে তাঁর পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলের বইপুস্তকও হারিয়ে গেছে।
ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, তাঁদের কাছে কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি। রাজ্য সরকার দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। তাঁদের আশ্রয় ও খাবার নেই।
সিমলা গত সপ্তাহে বেশ কয়েকটি ভূমিধস হয়েছে। ১০ দিনে বৃষ্টিতে ২৬টি ভূমিধস হয়েছে। এতে ২৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এই মাসে ভারী বর্ষণে মোট ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যেখানে হিমাচল প্রদেশে গত ২৪ জুন বর্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রাণ হারিয়েছেন ২৩৮ জন এবং নিখোঁজ হয়েছেন ৪০ জন।