ভারতে অবসরপ্রাপ্ত এক আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে ৪১ বছর পুরোনো একটি মামলায় জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। সাবেক কুলদীপ শর্মা ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিশেষত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কট্টর সমালোচক। ফলে এই আইনি পদক্ষেপ নিয়ে তুমুল রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে।
১৯৮৪ সালের একটি ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত এই মামলায় কুলদীপ শর্মাকে তৎকালীন কংগ্রেস নেতার ওপর নির্যাতনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
দ্য ওয়্যারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮৪ সালের মে মাসে, গুজরাটের কচ্ছ জেলার নালিয়াতে একটি মামলার তদন্ত সংক্রান্ত হয়রানির অভিযোগ জানাতে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা কুলদীপ শর্মার (তখন তিনি এসপি ছিলেন) কাছে যান। এই দলে ছিলেন কংগ্রেস নেতা হাতি আব্দুল্লাহ হাজি ইব্রাহিম (ইবলা শেঠ)। অভিযোগ রয়েছে, ইবলা শেঠকে ‘চোরাকারবারি’ আখ্যা দিয়ে কুলদীপ শর্মা তাঁকে পাশের ঘরে নিয়ে যান। সেখানে ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ গিরিশ বাসাবাদা ও আরও দুই পুলিশ অফিসার (যারা বর্তমানে মৃত) শেঠকে মারধর করেন।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে কচ্ছের একটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কুলদীপ শর্মা ও বাসাবাদাকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দোষী সাব্যস্ত করে। আদালত ভুলভাবে আটক, অপরাধমূলক ভয় দেখানো এবং আঘাত করার অভিযোগে তাঁদের তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়। ২৪ সেপ্টেম্বরের দায়রা আদালত নিম্ন আদালতের এই রায় বহাল রাখে।
দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর হাইকোর্টে আবেদনের জন্য আদালত ১৫ দিনের স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে হাইকোর্ট থেকে আর কোনো স্থগিতাদেশ না মেলায়, কচ্ছের দায়রা আদালত কুলদীপ শর্মা এবং অবসরপ্রাপ্ত ডিএসপি গিরিশ বাসাবাদার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
কুলদীপ শর্মার আইনজীবী জানিয়েছেন, তাঁরা দায়রা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গুজরাট হাইকোর্টে আবেদন করেছেন এবং আত্মসমর্পণ থেকে অব্যাহতি, সাজার স্থগিতাদেশ এবং জামিনের আবেদন করেছেন।
১৯৭৬ ব্যাচের আইপিএস অফিসার কুলদীপ শর্মার বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপটি রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ তিনি বহুদিন ধরেই বিজেপি নেতৃত্বের কঠোর সমালোচক।
২০০৫ সালে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় তৎকালীন গুজরাটের জুনিয়র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে আড়াই কোটি রুপি ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন কুলদীপ শর্মা। ওই সময় কুলদীপ শর্মা সিআইডির অতিরিক্ত ডিজি ছিলেন এবং এই অভিযোগের তদন্ত শুরু করার পরই তাঁকে পুলিশ বাহিনী থেকে সরিয়ে গুজরাট স্টেট শিপ অ্যান্ড উল ডেভলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টে বদলি করা হয়।
২০১৫ সালে অবসর নেওয়ার প্রায় এক বছর পর কুলদীপ শর্মা কংগ্রেস দলে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি এমন এক ৪১ বছর পুরোনো মামলায় ফেঁসেছেন, যেখানে তিনি কংগ্রেস নেতার ওপরই নির্যাতন করার অভিযোগে অভিযুক্ত।
কুলদীপ শর্মার ভাই, অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার প্রদীপ শর্মাও দীর্ঘদিন ধরে গুজরাট সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত। প্রদীপ শর্মা ২০০১ সালের ভূমিকম্পের পর কচ্ছের কালেক্টর হিসেবে মোদির আস্থা অর্জন করলেও পরে সম্পর্ক খারাপ হয়। প্রদীপ শর্মা অভিযোগ করেন, মোদির নির্দেশে এক তরুণী স্থপতিকে আড়িপাতার বিষয়ে তিনি অবগত থাকায় তাঁকে হেনস্তা করা হচ্ছে। প্রদীপ শর্মা বর্তমানে অবৈধ জমি বরাদ্দ, ঘুষ ও অর্থ পাচার সংক্রান্ত ১৫টি ফৌজদারি মামলার সম্মুখীন এবং প্রায় ছয় বছর জেল খেটেছেন।
কুলদীপ শর্মা অতীতে সোহরাবুদ্দিন শেখ ভুয়া এনকাউন্টার মামলা এবং ১৯৮৪ সালের আরেকটি ভুয়ো এনকাউন্টার মামলাতেও অভিযুক্ত হয়েছিলেন। যদিও ২০১০ সালে গুজরাট হাইকোর্ট দ্বিতীয় মামলাটি বাতিল করে দেয়।