জ্বালানি তেল ডিজেল ক্রয়ে ফ্রান্সের কৃষকেরা যে কর সুবিধা পেয়ে থাকেন, সম্প্রতি তা বাতিলের পরিকল্পনা করছে সরকার ৷ পাশাপাশি কৃষকেরা অভিযোগ করছেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে বিদেশ থেকে সস্তায় কৃষিপণ্য এনে তাঁদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে সরকার ও খুচরা বিক্রেতারা। একদিকে জ্বালানি ক্রয়ে সুবিধা বাতিল, আবার পণ্যের দাম কমানোর জন্য চাপ প্রয়োগকে তাই মানতে পারছেন না তাঁরা। প্রতিবাদে তাই বিভিন্ন সবজি এবং ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাজধানী প্যারিসের কাছাকাছি এলাকায় রাজপথগুলো বন্ধ করে দিয়েছেন ক্ষুব্ধ কৃষকেরা।
এ বিষয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষকদের অভিনব প্রতিবাদের মুখে ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আত্তাল তাঁর মন্ত্রিসভাকে বিষয়টির সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ অবস্থায় ফরাসি কৃষিমন্ত্রী মার্ক ফ্যাঁসিউ এক ঘোষণায় জানিয়েছেন, বিষয়গুলোকে সহজ করার জন্য স্থায়ী সমাধান তৈরির কাজ চলছে। কৃষিব্যবস্থা, বিশেষ করে সাধারণ পরিবহনের বাইরে কৃষি-সংক্রান্ত কাজের নিমিত্তে ডিজেলের ব্যবহার নিয়ে মন্ত্রিপরিষদের এক আলোচনা শেষে এমন ঘোষণা দেন মার্ক।
এদিকে মার্সেই ও লিয়ঁর মধ্যে সংযোগকারী এ-৭ হাইওয়েতেও ছড়ানো ছিল টমেটো, বাঁধাকপি ও ফুলকপি। কৃষকেরা দাবি করেন, এসব সবজি প্রতিবেশী দেশ থেকে কম দামে আমদানি করা হচ্ছে।
গত বুধবার রাতে ফরাসি কৃষকদের শক্তিশালী সংগঠন এফএনএসইএ সরকারের কাছে ১০০টি দাবি উপস্থাপন করেছে। তারা দাবি করেছে, বিদেশ থেকে সস্তায় সবজি এনে তাদের অন্যায্য প্রতিযোগিতার মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।
কৃষকেরা আরও দাবি করেছেন, কৃষকদের ট্রাক্টর ও গাড়ির ক্ষেত্রে ডিজেলে ছাড় দিতে হবে, অবিলম্বে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেওয়া কৃষি ভর্তুকি তাঁদের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করতে হবে, বিমার অর্থ দেওয়ার গ্যারান্টি দিতে হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতি হলে তা পূরণ করতে হবে।
এ বিষয়ে ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষকদের প্রতিবাদের মুখে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ফরাসি সরকার। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে কৃষকেরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত থেকে তা শুরু হয়েছে।
নতুন প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আত্তালকে দুই সপ্তাহ আগে নিয়োগ করেছেন প্রেসিডেন্ট মাখোঁ। আত্তালের নেতৃত্বেই গতকাল অর্থ, পরিবেশ ও কৃষিমন্ত্রীরা আলোচনায় বসেছিলেন। আজ শুক্রবারের মধ্যেই কৃষকদের বিষয়ে একটি স্থায়ী সুরাহা দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচনকে সামনে রেখে কৃষকদের আন্দোলন নিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁর চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। অতি দক্ষিণপন্থীরা এই বিক্ষোভকে হাতিয়ার করতে পারে। অতি দক্ষিণপন্থী নেতা ম্যারি লি পেন সম্প্রতি বলেছিলেন, মাখোঁ কৃষকদের কাঁধে হাত রেখে কথা বলেন, তারপর তাঁদের পিঠে ছুরি মারেন। কৃষকেরাই সরকারের সবচেয়ে বড় শত্রু।