হোম > বিশ্ব > ইউরোপ

শিক্ষানীতির সমালোচনাকারী বিশেষজ্ঞদের ওপর নজরদারি করছে ব্রিটেন সরকার

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের শিক্ষানীতির সমালোচনাকারী শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের ওপর নজরদারি করছে যুক্তরাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অন্তত ৯ জন বিশেষজ্ঞ তাঁদের ওপর নজরদারির নথিপত্র জোগাড় করেছেন। কারও কারও ক্ষেত্রে এই নথির আকার প্রায় ৬০ পৃষ্ঠা। এর মধ্যে এক বিশেষজ্ঞ কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তার বিস্তারিত উল্লেখসহ বড় একটি এক্সেল স্প্রেডশিট পেয়েছেন। 

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানী বিভাগ অবজারভার এসব নথিপত্র প্রকাশ করেছে। 

একটি শিক্ষা সম্মেলনের দুজন পূর্বনির্ধারিত বিশেষজ্ঞ বক্তা সরকারের শিক্ষানীতির সমালোচক হওয়ায় সেই সম্মেলনই বাতিল করে দিয়েছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। 

প্রারম্ভিক শৈশবের ওপর লেখা সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের সহলেখক রুথ সোয়েইলস ও অ্যারন ব্র্যাডবারি গত মার্চে সরকারি অর্থায়নে আয়োজিত এক সম্মেলনে অভিভাবক ও নার্সারি কর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতা দেওয়ার কথা ছিল। তবে সম্মেলনের কয়েক দিন আগেই আয়োজকেরা জানান, তাঁরা প্রধান বক্তা হিসেবে অনুপযুক্ত হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্মেলনটি বাতিল করে দিয়েছে। 

শেষ পর্যন্ত সোয়েইলস ও ব্র্যাডবারি আইনি পদক্ষেপের হুমকি দেওয়ার পর সম্মেলনটি আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়। যদিও তাঁরা বক্তব্যে কী বলেন, তার ওপর নজরদারি করার জন্য একজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। 

নটিংহাম ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রারম্ভিক শৈশব বিষয়ের প্রধান প্রভাষক ব্র্যাডবারি দ্য অবজারভারকে বলেন, ‘আমি আয়োজকদের কাছ থেকে একটা ফোনকল পাই, যেখানে আমাকে বলা হয়, আমরা বক্তা হওয়ার কারণে কিছু উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আমরা সরকারি নীতির সমালোচনা করায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের অনুপযুক্ত বলে মনে করে।’ 

ব্র্যাডবারি বলেন, ‘এ আলোচনায় অংশ নিতে পারব না শোনার পর মনে হয়েছিল আমরা স্বৈরতন্ত্রে আছি, গণতন্ত্রে নয়। সেখানে আমাদের লালনপালন ও প্রারম্ভিক শিশু বিকাশ নিয়ে আলোচনা করার কথা, সেটি রাশিয়ার অভিযান নিয়ে গোপন কোনো আলোচনা তো নয়!’ 

সোয়েইলস একজন স্বাধীন পরামর্শদাতা। তিনি স্কুল ও নার্সারিগুলোয় শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষাদানের বিষয়ে পরামর্শ দেন। তাঁর ওপর নজরদারির খবরে তিনি এতটাই অবাক হন যে, পরে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাঁর ওপর কোনো নথি তৈরি করে থাকলে তা প্রকাশ করার দাবি জানান আবেদনে। 

এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত গ্রীষ্মের শেষে সোয়েইলস জানতে পারেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাঁর ওপর নজরদারির নথি তৈরি করেছে। এই নথিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্তরাজ্যের স্কুলগুলোর পরিদর্শক প্রতিষ্ঠান অফস্টেডের বিরুদ্ধে তাঁর সমালোচনামূলক পোস্টের তালিকা দেওয়া ছিল। এ ছাড়া শিশুদের শেখানোর জন্য সরকারের নির্দেশনা প্রচার না করে শিক্ষাবিদদের লেখা নির্দেশনামূলক পোস্ট দেওয়া ‘লাইক’ সংখ্যার তথ্যও সেই নথিতে উল্লেখ ছিল। 

সোয়েইলস বলেন, ‘তারা আমাকে চুপ করিয়ে দিতে চেয়েছে। তারা যা করেছে তাতে আমার আয়-উপার্জন বন্ধ করে দিতে পারত এবং এখনো বন্ধ করতে পারে।’ 

সোয়েইলসের পর আরও অনেক শিক্ষাবিদ তাঁদের ওপর নজরদারির নথি প্রকাশের আবেদন করেন। এসব আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তত ৯ জন শিক্ষাবিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের কর্মকাণ্ড এবং তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর তৈরি ‘অতি দীর্ঘ’ নথি হাতে পান। কয়েকজন প্রধান শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় ব্যক্তিত্ব এখনো তাঁদের ওপর তৈরি নথি হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। 

লিডস ট্রিনিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও শিক্ষা মনস্তত্ত্ববিদ ড. প্যাম জারভিস বলেন, তাঁর আবেদনের পর তাঁকে ৪০ পৃষ্ঠার এক দীর্ঘ নথি পাঠানো হয়েছে। এই নথিতে কর্মকর্তারা তাঁর টুইট, বিশেষ করে চার বছর বয়সী শিশুদের স্কুলের প্রাথমিক বছরের বেসলাইন মূল্যায়নের জন্য সরকারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের সমালোচনার কথা উল্লেখ রয়েছে। 

প্যাম বলেন, ‘আমার ওপর নজরদারির বিষয়টি আমাকে বেশ ক্ষুব্ধ করেছে। এখন আমার এ কাজ আরও বেশি করে চালিয়ে যেতে হবে। তাদের জানা উচিত, আমি আমৃত্যু এভাবেই কথা বলে যাব।’ 

আধুনিক ভাষা বিশেষজ্ঞ কারমেল ও’হ্যাগান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে একটি ই-মেইল বার্তা পান। বার্তায় তাঁর বিরুদ্ধে টুইটারে নিজস্ব মতামত চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করা হয়। এ ছাড়া তিনি একটি এক্সেল স্প্রেডশিট পান, যেখানে তিনি কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তা উল্লেখ করা ছিল। ৩৭ পৃষ্ঠার এই নথিতে তাঁকে নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের ই-মেইল বার্তাকে ‘শিশুসুলভ ও আক্রোশপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছেন কারমেল ও’হ্যাগান। 

এ বিষয়ে জটিল প্রায়োগিক ভাষাতত্ত্বের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ড. ইয়ান কুশিং বলেন, ‘আমার কাছে যে বিষয়টি সবচেয়ে উদ্বেগজনক মনে হচ্ছে তা হলো, সরকার এমন সময় নজরদারি প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সময় ও অর্থ অপচয় করেছে, যখন স্কুলগুলো অর্থনৈতিক দুর্দশা ও জীবনযাত্রার ব্য়য় নিয়ে সংকটে রয়েছে।’ 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় কেন সমালোচকদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষাবিদদের কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি করছে এবং সেই সবের নথিপত্র সংরক্ষণ করেছে—দ্য অবজারভারের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে তার কোনো জবাব কেউ দেননি।

শান্তির জন্য ন্যাটোর আশা ছাড়ার ইঙ্গিত দিল ইউক্রেন

১২৩ বন্দী মুক্তির বিনিময়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার পেল বেলারুশ

রাশিয়ার হামলায় বিদ্যুৎবিহীন ইউক্রেনের ১০ লাখ পরিবার

৫ ফুট উচ্চতার সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে ১৮০ অভিবাসী, চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ

ব্রিটেনে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে কোটি মুসলিম, বেশির ভাগই বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের

ইউক্রেনের ২ বন্দরে রুশ হামলায় ৩ তুর্কি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত

দনবাসে ‘মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল’ গড়তে চায় যুক্তরাষ্ট্র, ব্যবসা করবে সবাই

স্কুলে কিশোরীদের হেডস্কার্ফ পরা নিষিদ্ধ করল অস্ট্রিয়া

যুক্তরাজ্যে ভারতীয়সহ ৬০০ ঔপনিবেশিক প্রত্নবস্তু চুরি, দুই মাস পর জানাল পুলিশ

ভারতীয় কারিগরদের তৈরি চপ্পল লাখ টাকায় বিক্রি করবে প্রাডা