একদিকে জ্বালানি তেলের জন্য সারা দিন লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে, অন্যদিকে মোমবাতির আলোয় কাটাতে হচ্ছে সন্ধ্যা। স্মরণকালে এমন ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট দেখেনি শ্রীলঙ্কাবাসী। বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে দ্বীপদেশটি গুরুত্বপূর্ণ সব আমদানি পণ্যের জন্য অর্থ প্রদান করতে ব্যর্থ হওয়ায় জীবন রক্ষাকারী ওষুধ থেকে শুরু করে সিমেন্ট পর্যন্ত সবকিছুরই মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত এমন সমস্যায় পড়েনি দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। বর্তমানে মারাত্মক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটি। মুদ্রার দাম কমতে কমতে তলানিতে ঠেকেছে। সবকিছুর দাম ব্যাপক হারে বেড়েছে। বাড়ছে না খেতে পাওয়া মানুষের সংখ্যা, অর্ধেক সময়েই সেখানে বিদ্যুৎ থাকছে না।
খাদ্যের পাশাপাশি অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যও দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে শ্রীলঙ্কায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জ্বালানি ও রান্নার গ্যাস, যা শ্রীলঙ্কা বিদেশ থেকে আমদানি করে। আমদানির জন্য টাকা না থাকায় জ্বালানি তেলের দাম হু হু করে বেড়েছে। পেট্রলপাম্পে লাইন বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষদের।
জ্বালানির জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো জনসাধারণের অভিযোগ ক্ষোভে রূপ নিয়েছে। কলম্বোয় সাগায়ারানি নামে এক নারী বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, ‘আমি গত পাঁচ ঘণ্টা ধরে এখানে দাঁড়িয়ে আছি, রান্নার চুলা জ্বালাতে একটু কেরোসিনের জন্য অপেক্ষা করছি।’ তিনি আরও জানান, ‘ইতিমধ্যে গরমে তিনজন অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছেন। এটা অনেক কষ্টের, কিন্তু আমরা কী করতে পারি?’
শ্রীলঙ্কায় গত কয়েক মাস ধরে, জ্বালানি ও রান্নার গ্যাসের জন্য দীর্ঘ লাইন রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, বেড়েছে বিদ্যুৎবিভ্রাট। বুধবার থেকে দৈনিক ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় থাকবে বলে দ্বীপরাষ্ট্রের পাবলিক ইউটিলিটি কমিশন ঘোষণা করেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘জ্বালানির ঘাটতি এবং অপর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণে এমন ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে তারা। তবে যেসব এলাকায় ধনী ও প্রভাবশালীদের বসবাস রয়েছে, সেসব এলাকায় বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন দেখা যায়নি।
২০১৬ সালে ইস্টার সানডেতে একাধিক চার্চ ও হোটেলে জঙ্গি হামলা ও করোনা মহামারির পর পর্যটননির্ভর অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হয় শ্রীলঙ্কায়। সম্প্রতি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে জ্বালানির দাম বেড়ে পরিস্থিতিকে আরও কঠোর করে তুলেছে। শ্রীলঙ্কার ৫১ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণকে ‘অস্থিতিশীল’ হিসাবে বর্ণনা করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, দেশটি তার ঋণের দায়বদ্ধতা থেকে খেলাপি হতে পারে।