ভারতের কেরালায় বুধবার (১৫ অক্টোবর) মারা যান কেনিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাইলা ওডিঙ্গা। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) তাঁর মরদেহ একনজর দেখার জন্য কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অপেক্ষা করছিলেন বিপুলসংখ্যক সমর্থক। তাঁদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালালে অন্তত ৪ জন নিহত হন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
বহু দশক ধরে কেনিয়ার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা বিরোধীদলীয় নেতা রাইলা ওডিঙ্গা বুধবার ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮০ বছর বয়সে মারা যান। তিনি একসময় রাজনৈতিক বন্দী ছিলেন এবং পাঁচবার রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হয়েও জয়ী হতে পারেননি।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হাজারো সমর্থক ওডিঙ্গার মরদেহ দেখার জন্য রাজধানীর প্রধান স্টেডিয়ামে জড়ো হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশাল জনতা একপর্যায়ে স্টেডিয়ামের একটি গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করলে সেনারা ফাঁকা গুলি চালায়।
এক পুলিশ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, স্টেডিয়ামে অন্তত দুজন গুলিতে নিহত হন। পরে স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল কেটিএন নিউজ ও সিটিজেন টিভি জানায়, মৃতের সংখ্যা বেড়ে চারজনে দাঁড়িয়েছে এবং আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
গুলিবর্ষণের পর পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়ে হাজারো শোকাহতকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর স্টেডিয়ামটি প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়।
এর আগে সকালে ওডিঙ্গার হাজারো শোকাহত সমর্থক নাইরোবির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢুকে পড়েন। এই ঘটনায় বিমানবন্দরের কার্যক্রম দুই ঘণ্টার জন্য স্থগিত রাখতে হয়। কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো ও অন্যান্য কর্মকর্তারা সামরিক সম্মাননার মাধ্যমে ওডিঙ্গার মরদেহ গ্রহণ করেন।
শোকের জোয়ারে রাজধানীর সংলগ্ন সড়ক ও সংসদ ভবনের সামনেও ভিড় জমে। সরকার মূলত সংসদ চত্বরে ওডিঙ্গার মরদেহ প্রদর্শনের পরিকল্পনা করেছিল।
রাইলা ওডিঙ্গা মূলত বিরোধী রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত হলেও ২০০৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট রুটোর সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতাও করেন।
ওডিঙ্গার জনপ্রিয়তা বিশেষভাবে প্রবল ছিল পশ্চিম কেনিয়ার লুও সম্প্রদায়ের মধ্যে। এই সম্প্রদায়ের অনেকে বিশ্বাস করেন, নির্বাচনে বারবার জালিয়াতির কারণেই ওডিঙ্গা প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি।
ওডিঙ্গা সম্পর্কে নাইরোবির স্টেডিয়ামে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ফেলিক্স আম্বানি উনেক বলেন, ‘তিনি নিরলসভাবে বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য লড়েছেন। আমরা আজ যে স্বাধীনতা ভোগ করছি, তা তাঁর সংগ্রামেরই ফল।’