হোম > স্বাস্থ্য > স্বাস্থ্য-গবেষণা

ধীরে হাঁটলে মস্তিষ্ক ছোট হয়, আয়ু কমে: গবেষণা

বিবিসি

গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা ধীরে হাঁটেন, তাঁদের মস্তিষ্ক তুলনামূলকভাবে ছোট হয়। ছবি: আজকে পত্রিকা

আপনি প্রতিদিন কতটা দ্রুত হাঁটেন—এই সাধারণ অভ্যাস জানাতে পারে আপনার মস্তিষ্ক কতটা দ্রুত বুড়িয়ে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা ধীরে হাঁটেন, তাঁদের মস্তিষ্ক তুলনামূলকভাবে ছোট হয় এবং মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোয় ভিন্নতা থাকে।

দৃশ্যত সাধারণ মনে হলেও আপনি যখন দোকানে যান, পার্কে হাঁটেন বা বাসস্টপেজে পৌঁছান, সেই হাঁটার গতি শরীর ও মনের ভেতরের অবস্থা জানাতে পারে। এমনকি আপনি কত বছর বাঁচবেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আশঙ্কা বা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টিও ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে আপনার হাঁটার গতি। এটি ব্যবহার করে জানা যেতে পারে, আপনার কগনিটিভ বা মানসিক ক্ষমতা কোন গতিতে কমছে।

এই হাঁটার গতি পরিমাপকে বলা হয় ‘ওয়াকিং স্পিড টেস্ট’। এটি নির্ধারণ করে, একজন ব্যক্তি দৈনন্দিন কাজকর্ম কতটা স্বচ্ছন্দে করতে পারছেন। এটি দুর্বলতা শনাক্তের পাশাপাশি স্ট্রোকের পর মস্তিষ্কের পুনর্বাসন কেমন হবে, সেটিও অনুমান করতে পারে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটার গতি ধীর হওয়া স্বাভাবিক হলেও যদি হঠাৎ এই গতি কমে যায়, তবে তা হতে পারে শরীরে বড় ধরনের কোনো সমস্যা বা দুর্বলতার ইঙ্গিত।

‘গতি কমে গেলে বুঝতে হবে, কিছু একটা ঘটছে’

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ক্রিস্টিনা ডিয়েলি-কনরাইট বলেন, ‘যখন কারও হাঁটার গতি কমে আসে, তখন প্রায়ই দেখা যায়, তা শরীরের ভেতরের কোনো দুর্বলতার সঙ্গে সম্পর্কিত।’

‘সম্ভবত সেই ব্যক্তি কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন, ফলে তাঁর চলাফেরা কমে গেছে বা তিনি স্থবির হয়ে পড়েছেন। এর ফলে পেশিশক্তি ও অস্থিসন্ধির সচলতা কমে যায়, যা পরে আরও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে,’ বলেন কনরাইট।

গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা ধীরে হাঁটেন, তাঁদের মস্তিষ্ক তুলনামূলকভাবে ছোট হয়। ছবি: আজকে পত্রিকা

সহজ এক পরীক্ষা

এই হাঁটার গতি মাপতে প্রয়োজন শুধু একটি স্টপওয়াচ ও দূরত্ব মাপার একটি সরঞ্জাম। বাইরে বেশি জায়গা থাকলে ১০ মিটার হাঁটার পরীক্ষাটি করা যায়। প্রথমে ৫ মিটার পথ মেপে নিন, এরপর আরেকটি ১০ মিটার। ৫ মিটার পথ হেঁটে গতি নির্ধারণ করুন, এরপর ১০ মিটার পথ স্বাভাবিক গতিতে হাঁটুন। সময় নিয়ে গতি হিসাব করুন—১০ মিটারকে সময় দিয়ে ভাগ করুন।

আপনি যদি বাসায় থাকেন এবং জায়গা সীমিত থাকলে ৪ মিটার হাঁটার পরীক্ষাও করা যায়। ১ মিটার বাড়তি পথ রেখে ৪ মিটার হাঁটার সময় নিন। এরপর ৪ মিটারকে সময় দিয়ে ভাগ করে গতি নির্ধারণ করুন।

আপনি কোন গোষ্ঠীতে পড়েন

গড় হাঁটার গতি সাধারণত বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী ভিন্ন হয়—

৪০–৪৯ বছর: নারী–১.৩৯ মিটার/সেকেন্ড, পুরুষ–১.৪৩ মিটার/সেকেন্ড

৫০–৫৯ বছর: নারী–১.৩১ মিটার/সেকেন্ড, পুরুষ–১.৪৩ মিটার/সেকেন্ড

৬০–৬৯ বছর: নারী–১.২৪ মিটার/সেকেন্ড, পুরুষ–১.৪৩ মিটার/সেকেন্ড

৭০–৭৯ বছর: নারী–১.১৩ মিটার/সেকেন্ড, পুরুষ–১.২৬ মিটার/সেকেন্ড

৮০–৮৯ বছর: নারী–০.৯৪ মিটার/সেকেন্ড, পুরুষ–০.৯৭ মিটার/সেকেন্ড

আপনার ফোনে থাকা অ্যাপ, যেমন Walkmeter, MapMyWalk, Strava কিংবা Google Fit দিয়ে হাঁটার গতি নির্ধারণ করা যায়। এসব অ্যাপ জিপিএস ব্যবহার করে দূরত্ব ও সময় হিসাব করে গতি বের করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বয়সভিত্তিক হাঁটার গতি থেকে ভবিষ্যতের আয়ু অনুমান করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ৩৪ হাজার মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যাঁদের হাঁটার গতি সবচেয়ে কম, ৭৫ বছর বয়সে তাঁদের ১০ বছর বাঁচার সম্ভাবনা মাত্র ১৯ শতাংশ। অথচ যাঁরা দ্রুত হাঁটেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা ৮৭ শতাংশ।

একটা ব্যাখ্যা হতে পারে, যাঁরা আগে থেকেই অসুস্থ, তাঁরা কম চলাফেরা করেন। কিন্তু ২০০৯ সালে ফ্রান্সের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এমনকি সুস্থ ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের মধ্যেও যাঁদের গতি ধীর, তাঁদের হৃদ্‌রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল তিন গুণ বেশি।

গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা ধীরে হাঁটেন, তাঁদের মস্তিষ্ক তুলনামূলকভাবে ছোট হয়। ছবি: আজকে পত্রিকা

‘হাঁটা আসলে একসঙ্গে অনেক কিছু’

ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান ও স্নায়ুবিজ্ঞান বিভাগের গবেষক লাইন রাসমুসেন বলেন, ‘হাঁটা যতটা সহজ মনে হয়, বাস্তবে তা নয়। এ ক্ষেত্রে হাড়-মাংসপেশি, চোখ, হৃদ্‌যন্ত্র, ফুসফুস ও মস্তিষ্ক—সবকিছুকে একসঙ্গে কাজ করতে হয়।’

তাঁর মতে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের এসব কার্যকারিতা কমে যায়। তাই ধীরগতিতে হাঁটা বয়সজনিত সার্বিক অবক্ষয়ের ইঙ্গিত হতে পারে।

এমনকি শুধু প্রবীণদের ক্ষেত্রেই নয়, বরং মাঝবয়সীদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৫ বছর বয়সেও হাঁটার গতি জানিয়ে দিতে পারে শরীর ও মস্তিষ্ক কতটা দ্রুত বার্ধক্যের দিকে এগোচ্ছে।

‘তিন বছর বয়সের মেধা জানিয়ে দেয় ৪৫ বছরে হাঁটার গতি’

নিউজিল্যান্ডের ডানিডিন শহরে ১৯৭২–৭৩ সালে জন্ম নেওয়া ১ হাজারের বেশি মানুষকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি এক গবেষণা করা হয়। এই গবেষণায় ৯০৪ জনের মধ্যে দেখা গেছে, যাঁদের হাঁটার গতি ধীর, তাঁদের ফুসফুস, দাঁত ও রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে দুর্বল। এমনকি উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, কম কার্ডিও ফিটনেসের মতো বার্ধক্যের বলিরেখা বেশি দেখা গেছে। তাঁদের মুষ্টিশক্তিও দুর্বল ছিল এবং চেয়ার থেকে উঠতেও সমস্যা হচ্ছিল।

ব্রেইন স্ক্যানে দেখা গেছে, ধীরগতির হাঁটার সঙ্গে ছোট মস্তিষ্ক, পাতলা নিউকোর্টেক্স এবং অতিরিক্ত হোয়াইট ম্যাটার যুক্ত। এমনকি তাঁদের মুখাবয়বও অন্যদের তুলনায় বেশি বয়সী মনে হয়েছে।

গবেষকেরা আরও দেখেছেন, এই পার্থক্য অনেক আগে থেকেই ছিল। তিন বছর বয়সে বুদ্ধিমত্তা, ভাষা এবং শরীরের গতি নিয়ে করা পরীক্ষাগুলোর ফলাফল দিয়েই ৪৫ বছরে হাঁটার গতির পূর্বাভাস দেওয়া গিয়েছিল।

রাসমুসেন বলেন, ‘সবচেয়ে অবাক হয়েছি এই দেখে যে ৪৫ বছর বয়সে একজন কীভাবে হাঁটছেন, তা জানিয়ে দিচ্ছে তাঁর শৈশবের মানসিক সক্ষমতা!’

সমাধান হাতের নাগালে

তবে নিজেরা ধীরগতিতে হাঁটাহাঁটি করেন বলে যাঁদের মনে হয়, তাঁদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। হাঁটার গতি বাড়ানো সম্ভব। ক্যানসার রোগীদের নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ডিয়েলি-কনরাইট দেখেছেন, হাঁটার সময় ও গতি প্রতি তিন-চার সপ্তাহ পর বাড়ালে ধীরে ধীরে তা উন্নত হয়।

তিনি বলেন, ‘যেকোনো সুযোগে হাঁটা দরকার। এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ তাঁর পরামর্শ, গন্তব্যে যাওয়ার সময় গাড়ি কিছুটা দূরে পার্ক করুন, বন্ধুদের সঙ্গে হাঁটার পরিকল্পনা করুন কিংবা পোষা প্রাণী নিয়ে বের হন।

‘বিশেষ করে যাঁরা বসে কাজ করেন, তাঁদের হাঁটার বিরতি নেওয়া জরুরি। এমনকি বাথরুমে যাওয়ার জন্য হলেও পাঁচ মিনিট হাঁটুন বা আশপাশে ছোট একটি চক্কর দিন—তাতে উপকার মিলবেই,’ বলেন ডিয়েলি-কনরাইট।

বিশ্বে প্রথমবারের মতো জিন থেরাপিতে সুস্থ বিরল রোগে আক্রান্ত অলিভার

সংগীত ওষুধের কাজ করে—দাবি মস্তিষ্ক বিজ্ঞানীদের

প্রজনন স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হতে পারে শহুরে জীবন, বলছেন বিজ্ঞানীরা

মানসিক স্বাস্থ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ডা. ফাহিমা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডুবে ঘুম হারাচ্ছেন বাংলাদেশি তরুণেরা: গবেষণা

শিশু-কিশোরদের মধ্যেও বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপ

ডায়াবেটিস ফেডারেশন: প্রাপ্তবয়স্কের ১৩ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগী

আইসিডিডিআরবির গবেষণা: নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে প্রাণঘাতী ছত্রাক

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রশিক্ষণ আয়োজন

মানসিক চাপ ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে শিল্পকর্ম