ডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিস মেলাইটাস হলো একটি বিপাকজনিত সমস্যা, যেখানে রক্তের শর্করা স্থায়ীভাবে বেড়ে যায়। বংশগত বা পারিপার্শ্বিক অথবা উভয় কারণে ইনসুলিন নামক হরমোনের নিঃসরণ কমে গেলে বা ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমে গেলে অথবা উভয়ের মিলিত প্রভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।বংশগত কারণ, স্থূলতা, অলস জীবনযাপনের অভ্যাস তথা কম শারীরিক পরিশ্রম ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার মূল উপায় হলো:
- প্রয়োজনীয় ওষুধ খাওয়া
- ব্যায়াম এবং
- ডায়াবেটিস বিষয়ে শিক্ষা লাভ করা।
খাবার যতটুকু যেভাবে
খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখাই ডায়াবেটিস রোগের প্রধান চিকিৎসা। ব্যক্তির ওজন, উচ্চতা ও শারীরিক পরিশ্রমের ভিত্তিতে ক্যালরির চাহিদা নির্ণয় করতে হয়।
- ব্যক্তির মোট চাহিদার ৫০-৬০ শতাংশ ক্যালরি আসতে হবে শর্করাজাতীয় খাদ্য থেকে। তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সরল শর্করা, যেমন: চিনি, গুড়, গ্লুকোজ বর্জন করতে হবে।
- প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ০.৮ থেকে ১ গ্রাম আমিষ বা প্রোটিন দরকার হয়, যা অবশ্যই খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। দৈনিক এই চাহিদা পূরণ করতে হবে। অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক একজন ব্যক্তির
- সুস্থ অবস্থায় শরীরের ওজন ৬৫ কেজি হলে তাঁকে ৬৫ গ্রাম প্রোটিন দৈনিক খেতে হবে।
- মোট ক্যালরির ২০-৩০ শতাংশ আসতে হবে চর্বিজাতীয় খাবার থেকে। উপকারী ও ক্ষতিকর এ দুই ধরনের চর্বি আছে। যেমন: সামুদ্রিক মাছের তেল, সয়াবিন তেল, অলিভ অয়েল। এগুলো উপকারী চর্বি। আর বর্জনীয় চর্বির মধ্যে পড়ে ঘি, মাখন, ডালডা, মাংসের চর্বি। তেল অবশ্যই পরিমাণমতো খেতে হবে।
- শাকসবজি, লাল চাল, লাল আটা, ফলমূলের মতো আঁশযুক্ত খাবার প্রতিদিন খেতে হবে।
- বর্জন করতে হবে চিনি ও মিষ্টিজাতীয় সব খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, কনডেন্সড মিল্ক, কোমল পানীয়, চর্বিযুক্ত মাংস ইত্যাদি।
- পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে মাছ, মুরগি, ডাল, দুধ, ডিম, লাল চাল, লাল আটা, আপেল, কলা, কমলা, মাল্টা, আমড়া।
- বেশি খেতে হবে লেবু দিয়ে গ্রিন টি, আদা বা লেবু চা, টক ফল, সবজি, চিনি ছাড়া খাবার, কম লবণযুক্ত খাবার। পান করতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি।
- তামাকজাত সব পণ্য সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে।
- ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে ফিট থাকতে হবে।
লেখক: সিনিয়র নিউট্রিশনিস্ট, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ঢাকা