হোম > ফ্যাক্টচেক > জানি, কিন্তু ভুল

শিক্ষকের কোলে শিশুটি কার?

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক

ফেসবুকে ছবিটি অনেকদিন থেকেই ঘুরছে। ছবির সঙ্গে ক্যাপশনে লেখা হচ্ছে, ছবিটি একজন মা হারা সন্তানের। শিক্ষক বাবা সন্তানকে কোলে নিয়েই ক্লাস নিচ্ছেন। সন্তান জন্মের সময় মারা গেছেন মা।

ফেসবুকে অসংখ্য পেজ, আইডি ও গ্রুপে এই ছবি পাওয়া যায়। সম্প্রতি কিছু অনলাইন পোর্টাল ছবির সঙ্গে ওই ক্যাপশন ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ছবিটি আবারও ভাইরাল হয়েছে।

ওই ছবি নিয়ে প্রচলিত গল্পটি এরকম, ‘একজন ব্যক্তি আছেন যার স্ত্রী সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান এবং তারপর তিনি একা হয়ে যান। একা থাকার কারণে তাদের সন্তানদের সমস্ত দায়িত্ব তার উপর এসে পড়ে। ছেলেকে কোলে নিয়েই তিনি কলেজে পড়াতে যান। এই কারণে কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও তাকে খুব সম্মান করে।

অনেকেই এমন কঠিন পরিস্থিতিতে এসে হাল ছেড়ে দেন বা অন্য কোন পথ অবলম্বন করেন। কিন্তু তিনি না অন্য কোন পথ অবলম্বন করেছেন না হাল ছেড়েছেন তিনি বাবা হিসেবে নিজের সমস্ত দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি মা হিসেবেও সমস্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি তিনি একজন শিক্ষক হওয়ার দায়িত্বও খুব সুন্দরভাবে পালন করেছেন। সমাজের এরকম শিক্ষক এবং বাবাদের কুর্নিশ জানাই।’

এরকম কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানেএখানে

ফ্যাক্টচেক
রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতি ব্যবহার করে মূল ছবিটি পাওয়া যায় মইসেস রেইস সেন্দোভাল (Moisés Reyes Sandoval) নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে। ২০১৬ সালের ৬ জুলাই ওই আইডিতে কাভার ছবি হিসেবে এটি আপলোড করা হয়েছিল।

ছবির সঙ্গে স্প্যানিশ ভাষায় লেখা ক্যাপশনটি গুগল ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে অনুবাদ করে জানা যায়, ছবিটিতে যে সন্তানকে দেখা যাচ্ছে, সেটি তাঁর একজন শিক্ষার্থীর। বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও সেই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়েননি। নোট নেওয়ার সময় যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য সহযোগিতা করতে চেয়েছিলেন অধ্যাপক। নিজেই বেবি ক্যারিয়ার ব্যাগে শিশুটিকে কোলে নেন তিনি।

২০১৬ সালের ১৬ জুলাই মার্কিন সম্প্রচার মাধ্যম সিএনএনের মেক্সিকো সংস্করণে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মইসেস রেইস সেন্দোভাল মেক্সিকোর ইন্টার-আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ফর ডেভেলপমেন্টের (ইউএনআইডি) আইন বিভাগের অধ্যাপক। সিএনএনের ওই প্রতিবেদনে তাঁর ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশন উদ্ধৃত করা হয়।

সিএনএনের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইয়েলেনা সালাস নামের একজন শিক্ষার্থী তাঁর নবজাতককে নিয়েই ক্লাসে এসেছিলেন। অধ্যাপক মইসেস সে সময় আন্তর্জাতিক আইনের সংজ্ঞা পড়াচ্ছিলেন। এমন সময় শিশুটি কেঁদে ওঠে। তখন তিনি শিশুটিকে কোলে তুলে নেন। শিশুটি তাঁর বুকেই ঘুমিয়ে পড়ে।

অধ্যাপক রেইস স্যান্ডোভাল সিএনএনকে বলেছিলেন, তাঁর দুই শিক্ষার্থী তাঁদের কয়েক মাস বয়সী শিশুদের নিয়ে ক্লাসে এসেছিল। তাঁদের এই প্রচেষ্টাকে অনুপ্রাণিত করতেই তিনি শিশু কোলে নিয়ে পাঠদান করেছিলেন।

প্রসঙ্গত, অধ্যাপক ময়সেসের স্ত্রী আরিয়ানা ইবারা জীবিত। মইসেস ও আরিয়ানার ফেসবুক আইডিতে তাঁদের বেশ কিছু যুগল ছবিও দেখতে পাওয়া যায়।

উইকিপিডিয়ায় মইসেসের একটি প্রোফাইল পেজ আছেসেখান থেকে জানা যায়, ৩৬ বছর বয়সী মইসেস সম্প্রতি রাজনীতিতেও যোগ দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি মেক্সিকোর আকাপুলকো এলাকার জেলা-৭-এর লোকাল ডেপুটির দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি সাংবিধানিক আইনে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ালেখা করছেন।

সিদ্ধান্ত
মূলত পুরোনা ছবি নতুন করে ভাইরাল হয়েছে। আর ছবিতে যে শিশুটিকে দেখা যাচ্ছে তা ওই শিক্ষকের নয়, তাঁরই এক শিক্ষার্থীর সন্তান। ওই সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে ওই শিক্ষকের স্ত্রী মারা গেছেন এ তথ্যটিও সঠিক নয়। ছবিতে যে শিক্ষককে দেখা যাচ্ছে তিনি মেক্সিকোর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, রেইস সেন্দোভাল। তাঁর স্ত্রী আরিয়ানা ইবারা, এখনো জীবিত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

ব্রণ দূর করার ক্ষেত্রে টুথপেস্টের ব্যবহার কার্যকরী? চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

খাওয়ার সময় পানি পান কি হজমে সমস্যা করে, চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

চর্বিযুক্ত খাবার খেলে কি ওজন বেড়ে যায়, চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাজাতীয় খাবার মানুষকে স্থূল করে? চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

সান্ডার তেলে কি কাজ হয়, চিকিৎসকেরা কী বলছেন

ইচ্ছা করে ঘামলে কি জ্বর ছেড়ে যায়, চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

পায়ের ওপর পা তুলে বসলে কি শিরা স্থায়ীভাবে ফুলে যায়, চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

কাছ থেকে টিভি দেখলে চোখের ক্ষতি হয়? চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

ঠান্ডা লাগা থেকে সর্দি-কাশি হয় না, কারণ অন্য

চিনি খেলে কি শিশুরা অতিরিক্ত চঞ্চল হয়, চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে