হোম > ফ্যাক্টচেক > জানি, কিন্তু ভুল

রোজা রেখে লিপস্টিক, নেইল পলিশ, টুথপেস্ট ব্যবহার করা যাবে কি 

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা রোজা পালন করছেন। এটি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। ইসলামের দৃষ্টিতে সাবালক বা প্রাপ্তবয়স্ক ও শারিরীক-মানসিকভাবে সুস্থ সব ব্যক্তির জন্যই রোজা রাখা ফরজ। রোজা পরিপালনে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হয়। এসব নিয়ম-নীতি নিয়ে নানা ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে এমন কিছু ভুল ধারণা খণ্ডন করেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ— 

  •  টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করলে রোজা ভেঙে যাবে
  •  থুতু গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে
  •  ইনসুলিন নিলে রোজা ভেঙে যাবে
  • রোজা রেখে গোসল-সাঁতার কাটা
  •  রোজা রেখে লিপস্টিক-নেইল পলিশ ব্যবহার

টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করলে রোজা ভেঙে যাবে

রমজান মাসে রোজা রেখে বা সাহরি খাওয়ার পর দিনের বেলা টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা যাবে কি না এমন প্রশ্ন শোনা যায় রোজাদারদের কাছ থেকে। রোজা ভেঙে যাবে ধারণা থেকে অনেকে এভাবে দাঁত ব্রাশ করা থেকে বিরত থাকেন। রোজা রেখে টুথপেস্ট ব্যবহার করে দাঁত ব্রাশ করা যাবে কি না এমন প্রশ্নে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া বিভাগ দারুল ইফতা জানায়, টুথপেস্ট ব্যবহার না করে কেবল ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে টুথপেস্ট ব্যবহার করে দাঁত মাজা মাকরুহ বা অপছন্দীয় কাছ। আবার এভাবে ব্রাশ করার সময় মুখগহবরে পেস্টের কণা ঢুকে গেলে রোজা ভেঙে যাবে। তাই সতর্কতাবশত রোজা রাখা অবস্থায় পেস্ট ব্যবহার করে দাঁত মাজা থেকে বিরত থাকা ভালো। 

ইসলামি জিজ্ঞাসার ওয়েবসাইট ইসলাম কিউ এতে একই ধারণা নিয়ে বলা হয়েছে, রোজা রেখে দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙে যায় না। তাই টুথপেস্ট ব্যবহার করে রোজা অবস্থায় দাঁত মাজা যাবে। তবে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে টুথপেস্ট মুখের ভেতর চলে না যায়। 

আরব আমিরাতের দুবাইয়ের ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড চ্যারিটেবল অ্যাক্টিভিটিজ বিভাগের গ্র্যান্ড মুফতি আবদেল বাসেত আহমেদ হামদাল্লাহ এই প্রসঙ্গে গালফ নিউজকে জানান, টুথপেস্ট ব্যবহারে রোজা ভাঙে না, যদি না তা গলায় পৌঁছায়। তাই রোজা অবস্থায় সতর্কতামূলক টুথপেস্ট ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়। এর পরিবর্তে রোজাদাররা মেসওয়াক ব্যবহার করতে পারেন। 

থুতু গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে
রোজা রেখে থুতু গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে- এমন ধারণা থেকে অনেক রোজাদার ব্যক্তি থুতু বাইরে ফেলেন। দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া বিভাগ দারুল ইফতা এমন এক প্রশ্নের উত্তরে জানায়, রোজা অবস্থায় কেউ নিজের থুতু গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে গিলে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। 

একই প্রসঙ্গে ইসলামি জিজ্ঞাসার ওয়েবসাইট ইসলাম কিউ এতে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি নিজের থুতু গিলে ফেলে তাহলে তাঁর রোজা ভঙ্গ হবে না, পরিমাণ বেশিও হলেও না। এটি যদি শ্লেষ্মার মতো গাঢ় হয়, তাহলে সেটি না গিলে ফেলে দিতে হবে। তবে কেউ যদি শ্লেষ্মা গিলে ফেলে তাতেও রোজা ভঙ্গ হবে না। 

ইনসুলিন নিলে রোজা ভেঙে যাবে
রোজা রেখে ইনসুলিন নেওয়ার ব্যাপারে গ্র্যান্ড মুফতি বলেন, রোজা রেখে ইনসুলিন নিলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে মানুষকে ইনসুলিনের ডোজ নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যাতে ইনসুলিন ব্যবহারকারী ওইটুকুই ব্যবহার করে, যা শরীরের চিনির মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট। 

একই প্রসঙ্গে ইসলামি জিজ্ঞাসার ওয়েবসাইট ইসলাম কিউ এতে বলা হয়, চিকিৎসার উদ্দেশ্যে দিনের বেলা ইনসুলিন গ্রহণে কোনো সমস্যা নেই এবং যেসব রোজা অবস্থায় ইনসুলিন গ্রহণ করা হয়েছে, ওই রোজাগুলোর জন্য কাজা আদায় করতে হবে না। মিশরের বিচার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দার আল ইফতাও ইনসুলিন ব্যবহার প্রসঙ্গে একই তথ্য জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী রোজা অবস্থায় ইনসুলিন গ্রহণে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। 

রোজা রেখে লিপস্টিক-নেইল পলিশ ব্যবহার 

মালয়েশিয়া সরকারের ফতোয়া বিষয়ক অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে রোজা অবস্থায় লিপস্টিক-নেইল পলিশ ব্যবহার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, রমজান মাসে রোজা রেখে লিপস্টিক-নেইল পলিশ ব্যবহারে কোনো ক্ষতি নেই। এর কারণে রোজা ভঙ্গ হবে না, যদি না তা মুখের ভেতর প্রবেশ করে। 

গ্র্যান্ড মুফতি আবদেল বাসেত আহমেদ হামদাল্লাহ একই প্রসঙ্গে বলেন, রোজা অবস্থায় লিপস্টিক, নেইল পলিশ ব্যবহার বা ত্বকে যেকোনো ক্রিম ব্যবহারে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে অজুর আগে নেইল পলিশ অবশ্যই সরিয়ে নিতে হবে। 

লিপস্টিক, নেইল পলিশ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইসলাম কিউ এতে বলা হয়, লিপস্টিক, চোখে সুরমা ব্যবহারে রোজা ভঙ্গ হয় না। রোজা অবস্থায় ঠোঁট আর্দ্র রাখতে অয়েন্টমেন্ট ব্যবহারেও রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। এ ছাড়া শরীরের ত্বকে প্রয়োজনে ক্রিমও ব্যবহার করা যাবে রোজা রেখে। 

রোজা রেখে গোসল-সাঁতার কাটা 

রোজা রেখে গোসল ও সাঁতার কাটা প্রসঙ্গে মিশরের বিচার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দার আল ইফতা এক ফতোয়ায় জানায়, কোনো ব্যক্তি যদি মনে করেন সাঁতার কাটার সময় মুখ, নাক ও কান থেকে তাঁর গলায় পানি পৌঁছানোর সম্ভাবনা নেই, তাহলে রমজানে দিনের বেলায় সাঁতার কাটায় কোনো ক্ষতি নেই। কারণ তা করলে তার রোজা নষ্ট হবে না। তবে, আলেমদের মতে এই কাজ অপছন্দনীয়। 

হাদিস সংকলন আল-মোসান্নাফের বরাত দিয়ে দার আল ইফতা জানায়, তৃষ্ণা বা গরমের কারণে নবীকে (সা.) রোজা অবস্থায় মাথায় পানি ঢালতে দেখা গেছে। ইমাম নবুবি বলেছেন, রোজাদারের জন্য পানিতে ডুব দেওয়া বৈধ। আর যদি গলায় পানি চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সাঁতার কাটা উচিত নয়। 

ইমাম আর-রামলিকে উদ্ধৃত করে দার আল ইফতা জানায়, যদি কোনো ব্যক্তি জানে, সাঁতার কাটার সময় সাধারণত তার গলায় পানি আসে এবং সে তা এড়াতে পারে না, তাহলে তার জন্য সাঁতার কাটা হারাম এবং তার রোজা অবশ্যই বাতিল হয়ে যাবে। 

গ্র্যান্ড মুফতি আবদেল বাসেত আহমেদ হামদাল্লাহ বলেন, সাঁতার কাটলে রোজা ভেঙে যায় না। তবে পানি মুখ দিয়ে গলায় বা নাকের ভেতর প্রবেশ করলে রোজা ভেঙে যেতে পারে, কারণ পানি পেটে পৌঁছানোর সম্ভাবনা থাকে। তিনি আরও বলেন, যে কোনো পানি গলায় গেলে রোজা ভেঙে যাবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

ব্রণ দূর করার ক্ষেত্রে টুথপেস্টের ব্যবহার কার্যকরী? চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

খাওয়ার সময় পানি পান কি হজমে সমস্যা করে, চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

চর্বিযুক্ত খাবার খেলে কি ওজন বেড়ে যায়, চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাজাতীয় খাবার মানুষকে স্থূল করে? চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

সান্ডার তেলে কি কাজ হয়, চিকিৎসকেরা কী বলছেন

ইচ্ছা করে ঘামলে কি জ্বর ছেড়ে যায়, চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

পায়ের ওপর পা তুলে বসলে কি শিরা স্থায়ীভাবে ফুলে যায়, চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

কাছ থেকে টিভি দেখলে চোখের ক্ষতি হয়? চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে

ঠান্ডা লাগা থেকে সর্দি-কাশি হয় না, কারণ অন্য

চিনি খেলে কি শিশুরা অতিরিক্ত চঞ্চল হয়, চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে