সুকুমার রায়ের ‘বিষম চিন্তা’ ছড়াটির কথা মনে পড়ল আজকের পত্রিকার একটি শিরোনাম পড়ে। সত্যি তো, আমরা অনেকেই যখন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনন্দে মাতোয়ারা, তখন আনন্দে মাতোয়ারা, তখন কিছু মানুষের মাথায় যে ভিন্ন প্রশ্নও ঘুরপাক করছে, তা কি আমরা ভেবেছি? কথায় বলে, ‘কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ’। পদ্মা সেতু চালু হলে লাখ লাখ মানুষের সুবিধা হবে, সময় বাঁচবে, অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, দেশের সব অঞ্চলের সঙ্গে সড়কপথে সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। পদ্মা পারাপার হতে গিয়ে জটে পড়লে কত মানুষের কত ধরনের কষ্ট হয়। বহু মানুষ এই কষ্টে পড়ে বলেই আবার কিছু মানুষের আয়-উন্নতিও হয়।
‘জট ছুটলে পেট চলবে কীভাবে’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে এই অনেকের সুবিধা ও কিছু মানুষের অসুবিধার কথাটাই তুলে ধরা হয়েছে। সব মানুষের গল্প এক হয় না। প্রত্যেকটি মানুষের আলাদা আলাদা গল্প। মানুষের ভাবনাচিন্তাও সব সময় এক ধারায় চলে না। যেমন এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়া নিয়ে যাদের ভোগান্তি কমবে, তারা যেভাবে ভাবছে, তাদের মতো করে ভাবছে না ওই ঘাটকে কেন্দ্র করে যাদের জীবিকা চলে, সেই মানুষগুলো।
আজকের পত্রিকার প্রতিবেদক লিখেছেন: পদ্মা সেতু ঘিরে বহু মানুষের আনন্দ-অপেক্ষার বিপরীতে এমন শঙ্কায় পড়েছেন দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌঘাটের হকার-ব্যবসায়ীরা। তাঁরা মনে করছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে এই ঘাট তার যৌবন হারাবে। যানবাহনের চাপ থাকবে না। বরিশাল ও খুলনা বিভাগের অধিকাংশ গাড়ি চলাচল করবে পদ্মা সেতু দিয়ে। তখন শুধু ফরিদপুর, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার গাড়ি চলাচল করবে। যাত্রী ও যানবাহনের চাপ না থাকলে ঘাটের ওপর নির্ভরশীল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে শুরু করবে। এ ছাড়া ঘাটকে ঘিরে যাঁরা জীবিকা নির্বাহ করছেন, তাঁদের মধ্যে একটি গোষ্ঠী হচ্ছেন হকার। যাঁরা লঞ্চ, ফেরিতে ঘুরে ঘুরে যাত্রীদের কাছে বিক্রি করেন ঝালমুড়ি, সেদ্ধ ডিম, শিঙাড়া, শসা, ছোলা, বাদাম, পেয়ারা, আমড়াসহ নানা রকম মুখরোচক খাবার। অনেকেই ঘাটের পন্টুনের ওপর পণ্য বিক্রি করেন।
ঘাটের দুই পাড়ে দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়ায় গড়ে উঠেছে কয়েক শ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে খাবারের হোটেল। ঘাট দিয়ে যাতায়াতকারী হাজার হাজার যাত্রীই তাদের ক্রেতা। ঘাটে যখন দীর্ঘ জট লেগে যায়, তখন তাদের বেচাকেনা বেশি হয়। সেতু চালু হলে এই ঘাটের ব্যবহার কমে আসবে, সে সময় এখনকার মতো যাত্রী আসবে না। তখন এসব ব্যবসা টিকবে তো!
স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন
এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। পদ্মা সেতু চালু হলে যাঁরা অসুবিধায় পড়বেন, তাঁদের জন্য বিকল্প ভাবনা তো প্রকল্প তৈরির সময়ই থাকা উচিত ছিল। যেখানে সমস্যা, সেখানেই সমাধানের চিন্তা থাকা বাঞ্ছনীয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনো বিভাগ, সংস্থা এবং কর্মকর্তা কি এ নিয়ে ভাবার সময় পেয়েছেন?
পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আরও পড়ুন: