শিরোনামের এই প্রশ্ন শুনলে পর্দার কাইজার চৌধুরী হয়তো দ্বিধাগ্রস্ত কণ্ঠে বলে বসতেন, ‘ওহ্, তাই নাকি?’
হ্যাঁ, বাংলাদেশের এই নতুন সংস্করণের (পড়ুন ওটিটি) গোয়েন্দাটির মনে দ্বিধা আছে। নিজের কাজ নিয়ে সংশয়ও আছে। আছে প্রয়োজনে ‘মুখ খারাপ’ করার অভ্যাস। এই গোয়েন্দা যেমন নিজে কাঁদতে পারে, তেমনি সুযোগ বুঝে অন্যের মুখে আনতে পারে মুচকি হাসি। আর এই সবকিছু নিয়েই ‘কাইজার’।
স্ট্রিমিং সাইট হইচই–এ গত ৮ জুলাই থেকে চলছে কাইজার চৌধুরীর প্রথম সিজনের অভিযান। ওয়েব সিরিজটির মোট পর্ব নয়টি। ঘটনার ব্যাপ্তি অনুযায়ী একেকটি পর্বের দৈর্ঘ্য নির্ধারিত হয়েছে। যেমন প্রথম পর্বটিই প্রায় ৪০ মিনিটের। আবার কোনো কোনো পর্ব ২০ মিনিটেও শেষ হচ্ছে। পুরো বিষয়টিই নির্ধারিত হয়েছে গল্পের খাতিরে। ফলে অহেতুক কখনো স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকতে হয়নি।
কাইজারের কীর্তি–কাহিনি বলার সঙ্গে সঙ্গে ওয়েব সিরিজটির নির্মাণ সম্পর্কেও দু-একটি কথা বলা উচিত হবে। ক্যামেরার কাজ ভালো। সংলাপ কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটু অস্পষ্ট ছিল, তবে ঘটনার সঙ্গে মিলে গেছে বলে অতটা খারাপ লাগেনি। সিরিজের প্রতিটি পর্বে কলাকুশলীদের নাম দেখানোর সময় সুপরিচিত পপ কালচার আর নব্বইয়ের দশকের ঢাকার ভিডিও ফুটেজের মিশ্রণ চোখের জন্য ছিল আরামদায়ক। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক খারাপ লাগেনি, গোয়েন্দা গল্পের জন্য মানানসই। সুরে শিহরণ যেমন ছিল, তেমনি পাওয়া গেছে বিষাদও।
কাইজারে ফেলুদা এসেছে। ছিল কাকাবাবু–সন্তু বা ব্যোমকেশ বকশি থেকে আগাথা ত্রিস্টি বা আর্থার কোনান ডয়েলও। তবে কারও অন্তর্ভুক্তিই আরোপিত ছিল না, এটাই সবচেয়ে স্বস্তির। গল্প বা সংলাপের স্রোতেই সবাই এসেছে, আবার চলেও গেছে। আর এটাই কাইজারের চিত্রনাট্যের সবচেয়ে বড় গুণ। ওয়েব সিরিজে, বিশেষ করে সেটি যদি রহস্য–রোমাঞ্চভিত্তিক হয়, তবে টানটান গল্প ও চিত্রনাট্য প্রধান অস্ত্র বলে বিবেচিত ওটিটির দুনিয়ায়। এই জায়গাতে পুরোপুরি সফল কাইজার, কখনোই গল্পকে ঝুলে পড়তে দেওয়া হয়নি। ফলে নিতান্ত ঘটনাবিহীন পর্ব শেষেও কখনো মনে হবে না যে, ‘সময়টা নষ্ট হলো!’
এখন প্রশ্ন হলো, কাইজারই কি এ দেশের প্রথম সার্থক গোয়েন্দা চরিত্র? নির্দ্বিধায় ‘হ্যাঁ’ বলতে হলে কাইজারকে আরও কয়েকটা সিজন পাড়ি দিতে হবে। পরবর্তী সিজনের সম্ভাবনা প্রথম মৌসুমেই পাওয়া গেছে কিছুটা। তবে একটি কথা বলাই যায় যে, সম্ভাবনা প্রবল। আশা করা যায়, নিকট ভবিষ্যতেই আমরা হয়তো কাইজারের জীবনের পরবর্তী অধ্যায় পর্দায় রূপায়ণের খবর পাব। সেই পর্যন্ত না হয় ‘শুভকামনা’ জানিয়ে অপেক্ষায় থাকা যাক।