মীর্জা মো. মুন হৃদয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। হৃদয়ের ক্লিকে হৃদয় জুড়ায় সবার। তাঁর তোলা একেকটি ছবি যেন কথা বলে। ফটোগ্রাফির কারণে তিনি ক্যাম্পাসে ইতিমধ্যে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছেন।
ফটোগ্রাফার হৃদয়ের জাদুকরী ক্লিকের গল্পটাও বেশ দারুণ। একটা ভালো ছবি তুলতে তাঁকে ছুটে যেতে হয় দূর-দূরান্তে। এই ছোটাছুটির শুরুটা সেই ছোটবেলায়। প্রকৃতির ছবি তুলতে ভালো লাগত তাঁর। ছোটবেলায় মোবাইল ফোনের ক্যামেরা দিয়ে পাখির ছবি তুলতেন। কারণ, তখনো বড় লেন্সের ক্যামেরা ছিল না তাঁর। ২০১৮ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর ক্যামেরা কেনেন হৃদয়। সেই ক্যামেরায় প্রথম ছবি তুলেছিলেন একটি দোয়েলের। নিজের তোলা সেই ছবি দেখার পর ছবি তোলার আগ্রহ আরও বেড়ে যায় তাঁর।
হৃদয়ের বন্য প্রাণীর ছবি তোলার যাত্রা শুরু হয় কলেজজীবন থেকে। এখনো ভালো একটি ছবির জন্য ছুট দেন দেশের নানা প্রান্তে। একবার হাতির ছবি তুলতে গিয়ে পড়েন বিপদের মুখে। বনে হাতির ছবি তোলার একপর্যায়ে হারিয়ে ফেলেন রাস্তা। অন্যদিকে বন্য হাতি ততক্ষণে তেড়ে আসতে শুরু করেছে তাঁর দিকে। অনেক ছোটাছুটি করে শেষমেশ নিরাপদে বন থেকে বেরোতে সমর্থ হন তিনি। আরেকবার হাওরের পানিতে নেমে কালিম পাখির ছবি তুলতে গিয়ে জোঁকের মুখে পড়েন। ছবি তুলতে শুরু করার আগেও জানতেন না সেটা জোঁকের বাসা! সঙ্গী ফটোগ্রাফার যখন তাঁকে বিষয়টি জানান, ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে! দ্রুত পানি থেকে উঠে দেখেন, দুই পায়ে অসংখ্য জোঁক। সাপের ছবি তুলেতে গিয়ে একবার কামড়ই খেয়ে বসেছিলেন প্রায়! তারপরও হৃদয়ের ছবি তোলা থামেনি।
হৃদয় বলেন, ‘প্রথম দিনই কিন্তু ভালো ছবিটা তুলতে পারিনি। আস্তে আস্তে এগোতে হয়েছে। চেষ্টা করেছি প্রতিনিয়ত। ছবির প্রয়োজনে পানিতে নেমেছি, কাদায় নেমেছি। পাখি পেয়েছি, ক্লিক করেছি। এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছি ভালো করার।’
হৃদয়ের ছবি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে শোভা পাচ্ছে বিদেশি সংবাদমাধ্যমেও। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে তাঁর তোলা ছবি জায়গা পেয়েছে। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক পুরস্কারও। সিয়ানা ইন্টারন্যাশনাল ফটো অ্যাওয়ার্ড-২০২২ (অনূর্ধ্ব-২০)-এ রিমার্কেবল আর্ট ওয়ার্ক অংশে বিজয়ী হয়েছিলেন হৃদয়। ভবিষ্যতে বন্য প্রাণী নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে এই তরুণ ফটোগ্রাফারের।