ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। মাতৃভাষার অধিকারের জন্য যে সংগ্রাম বাঙালি করেছে, তা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। এই আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে শহীদ মিনার আমাদের জাতীয় জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের প্রথম শহীদ মিনার হিসেবে বিবেচিত রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটি এখনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি। এটি কেবল একটি স্থানীয় স্মৃতিচিহ্ন হয়ে আছে, অথচ এটি হতে পারত ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নিদর্শন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় যখন ভাষার দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকে, সেই রাতেই রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরা গড়ে তোলেন দেশের প্রথম শহীদ মিনার। ভাষার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা নিবেদন করতেই তাঁরা এই উদ্যোগ নেন। যেকোনো ঐতিহাসিক স্থাপনার মতো এই শহীদ মিনারের সংরক্ষণও জরুরি। কিন্তু যথাযথ সরকারি উদ্যোগের অভাবে এটি দিন দিন অযত্ন আর অবহেলার শিকার হচ্ছে। প্রয়োজনীয় প্রচারের অভাবে দেশের অনেকেই জানেন না দেশের প্রথম শহীদ মিনারটি রাজশাহীতে অবস্থিত। রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসের শহীদ মিনারটি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ হতো এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি একটি শিক্ষণীয় কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারত। শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের দাবি, রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসের শহীদ মিনারটিকে অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হোক এবং এর ইতিহাস সঠিকভাবে সংরক্ষিত হোক। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগের প্রকৃত চেতনা যথাযথভাবে সংরক্ষিত থাকে।
লেখক: শিক্ষার্থী, রাজশাহী কলেজ শাখা