চাঁদপুরে স্কাউট ক্যাম্প করতে গিয়ে ২০১৮ সালে মুগ্ধ ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। ক্যাম্পের আট দিন তাঁকে দেখেছি এক প্রাণোচ্ছল উদ্দীপ্ত তরুণ হিসেবে, যাঁর কোনো ক্লান্তি নেই, সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখ। ক্যাম্পের প্রথম দিন রাতের বেলা খুব ঝড় শুরু হলো। সেই ঝোড়ো বাতাস তাঁবু উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল প্রায়। জীবনের প্রথম ক্যাম্প। কিছু বুঝতে পারছি না। খুঁটি ধরে কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছি। নেটওয়ার্কের দুরবস্থার কারণে মোবাইল ফোনেও কাউকে পাচ্ছি না। বৃষ্টিতে ভিজে কাক হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।
একটু পর ঘুটঘুটে অন্ধকারে তাকিয়ে দেখি লাইট আর ছাতা নিয়ে কারা যেন আমাদের তাঁবুর দিকে আসছে। দেখি মুগ্ধ ভাইয়া আর আমাদের দলের ছেলেরা। তিনি এসেই দৌড়াদৌড়ি করে তাঁবুর পেগগুলো শক্ত করে বাঁধা শুরু করলেন, ইট এনে এনে চাপা দিতে থাকলেন। সবকিছু তিনি নিমেষেই ঠিকঠাক করে ফেললেন। আমি টর্চ ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তিনি বললেন, ‘শিখে রাখো কেমনে বাঁধতে হয়, কাজে লাগবে আবার।’
লঞ্চে যাতায়াতের সময়ও আমাদের আনন্দে মাতিয়ে রাখলেন তিনি। ক্যাম্পের দিনগুলোতে ঠিকমতো খাচ্ছি কি না, শরীর ঠিক আছে কি না খোঁজ রাখতেন। তিনি যে আর নেই, এ সংবাদ আমার এখনো কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না!
মুগ্ধ ভাইয়া খুবই মিশুক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। সহজে সবার সঙ্গে মিশতে পারতেন। এমনভাবে কথা বলতেন যেন অনেক দিনের পরিচয়। ক্যাম্প শেষে সবাই একত্র হলাম। সেদিন সঙ্গে আম্মু ছিল। আম্মুও মুগ্ধ ভাইয়ার মৃত্যুর সংবাদ শুনে বলেছেন, ‘আমাকে দেখেই কী সুন্দর হাসি দিয়ে সালাম দিত ছেলেটা। এখনো মনে আছে।’
লেখক: ফওজিয়া রহমান জেসী, শিক্ষার্থী,শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ