জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আগামী তিন দিন কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করবেন। এনবিআর বিলুপ্ত করে অধ্যাদেশ জারি করার প্রতিবাদে এই কর্মসূচির ডাক দেন তাঁরা। তবে কলম বিরতি পালনকালে তিনটি কার্যক্রম চালু থাকবে। আজ মঙ্গলবার (১৩ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনের সামনে অধ্যাদেশ বাতিল দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে এই কার্যক্রম নিয়ে জানানো হয়।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, তাঁদের মতামত উপেক্ষা করে রাতের বেলা গোপনীয়ভাবে প্রতিষ্ঠানটির বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।
এ সময় বক্তব্য দেন কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কণ্ডু, যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা শাহরিন সুস্মিতা এবং উপ কর কমিশনার শাহ মোহাম্মদ ফজলে এলাহী। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ৩০০ থেকে ৪০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশগ্রহণ করেন।
আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে সাধন কুমার বলেন, ‘আগামী ১৪,১৫ এবং ১৭ মে—এই তিন দিন আমাদের এনবিআরে অধীনস্থ সকল দপ্তরে (আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট) কলম বিরতি চলবে। আগামীকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত, ১৫ মে বৃহস্পতিবার এবং ১৭ মে শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী কলম বিরতি পালন করবেন।’
তবে এই সময়ে তিনটি কার্যক্রম চালু রাখার কথা জানান সাধন কুমার। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক যাত্রী সেবা, বাজেট, রপ্তানি এই তিন কার্যক্রম চালু থাকবে। বাকি সকল কার্যক্রম এই কলম বিরতির আওতায় বন্ধ থাকবে। পরবর্তী কর্মসূচি ১৭ মে শনিবার বিকাল ৩টায় ঘোষণা করব।’
এর আগে সোমবার (১২ মে) মধ্যরাতে অন্তর্বর্তী সরকার এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ নামের দুটি পৃথক বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের ২৫ দিন পর এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামের দুটি আলাদা বিভাগ করতে গত ১৭ এপ্রিল খসড়া অধ্যাদেশে অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। অধ্যাদেশের খসড়া আপত্তি তুলে এটি বাতিলের দাবি তোলে আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের সদস্যদের সমিতি। পরে ক্যাডার সার্ভিসের বাইরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আন্দোলনে যোগ দেন।
অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কণ্ডু বলেন, ‘গতকাল জাতীয় রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি হলো। এই অধ্যাদেশটি হয়েছে বর্তমান সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে। সংস্কারের জন্য যে পরামর্শক কমিটি সরকার করেছিল, সেই কমিটিতে যোগ্য ব্যক্তিদেরই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সেই কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। প্রত্যাশী সংগঠন হিসেবে আমরাও জানতে পারিনি, ভালোমন্দ বিষয়গুলো নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনাই হয়নি। আমাদের মতামতকে উপেক্ষা করে গতকাল রাতে অনেকটা গোপনীয়ভাবে এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। অন্য কোনো অধ্যাদেশের মতো জানিয়ে করা হয়নি। সেটার প্রতিবাদে আমরা সমবেত হয়েছি।’