পুঁজিবাজারে ক্রমাগত দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হাহাকার চলছে। এর কারণ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ক্যাপিটাল গেইন বা শেয়ার বিক্রি করে অর্জিত মুনাফার ওপর করারোপের খবর। তবে এমন অবস্থায় করারোপ না করা এবং অন্য দাবি আদায়ে অংশীজনদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বাজেটে প্রতিবছরই পুঁজিবাজারের জন্য নীতি সহায়তা চান অংশীজনেরা। তবে সেগুলোর বাস্তবায়ন তেমনটা হয় না। বাজেটে দাবি বাস্তবায়নের জন্য পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টদের তৎপরতাও খুব বেশি চোখে পড়ে না।
যদিও অংশীজনেরা বলছেন, বাজেটে দাবির প্রতিফলন ঘটাতে তাঁরা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। এর বেশি কিছুই করার নেই। তবে দাবি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরও নিবিড় তদবিরের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
তথ্য বলছে, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর প্রায় তিন মাসের দরপতনে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি মূলধন হারানোর পর পুঁজিবাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। তবে ক্যাপিটাল গেইনে সম্ভাব্য করারোপের খবরে নতুন করে দরপতন দেখা দিয়েছে। গত ৮ কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক কমেছে ৩৮৪ পয়েন্ট। এতে বাজার মূলধন বা বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমেছে ৫৭ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা।
এর আগে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এবং ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাফিজ মো. হাসান বাবু ক্যাপিটাল গেইনে করারোপ না করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রতি অনুরোধ জানান। আর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। তবে এনবিআর সেই অনুরোধ রাখবে কি না সে বিষয়ে পরিষ্কার তথ্য মেলেনি।
পুঁজিবাজারের অন্যতম বড় অংশীজন দেশের মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর জোট বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মাজেদা খাতুন বলেন, বাজেটে দাবি বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। অনেকবার সশরীরে গেছি। অর্থ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি।
সর্বাত্মক চেষ্টার কথা জানিয়ে পুঁজিবাজারের ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এনবিআর চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমাদের দাবির পক্ষে যেসব যুক্তি রয়েছে, সেগুলো উপস্থাপন করেছি।’
সাইফুল ইসলাম যোগ করেন, ‘এনবিআর ছাড়াও আমরা অর্থমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। আমাদের বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। আমাদের দাবির প্রতি বিএসইসি ও ডিএসইর সমর্থন ছিল। আমাদের যত দূর সম্ভব, তত দূর পর্যন্ত গিয়েছি।’
মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরামের সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘আমরা বাজেটে দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
তবে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ঘাটতি থেকে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে সায়েদুর রহমান বলেন, ‘অধিকতর যোগাযোগ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। দাবির পেছনে দেশের অর্থনীতির স্বার্থ বোঝাতে সক্ষম হলেই তা বাস্তবায়ন হবে। আমরা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত করে যাব।’
তবে দাবিগুলো বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য গতানুগতিক আলোচনার বাইরে গিয়ে নিবিড় আলোচনার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, অর্থসচিব, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসতে হবে। গতানুগতিক বৈঠক করলে এবং চাইলে হবে না। সবার সঙ্গে আরও তীব্র ও গভীর আলোচনা করতে হবে। তাঁদেরকে যৌক্তিকতা বোঝাতে হবে।