সিলেটের মানুষের চালচলন, আতিথেয়তা, সংস্কৃতি, স্বতন্ত্র ঐতিহ্যের সুনাম দেশ ছাড়িয়ে সুদূর বিদেশেও বিস্তৃত। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তর জনপদ সিলেট। রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য। স্বকীয়তায় এখানকার মানুষ উদ্ভাসিত। বিশেষ করে সিলেটের একান্ত আপন ঐতিহ্য হচ্ছে রমজান মাসে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে ইফতারি নিয়ে যাওয়ার। সিলেটি আঞ্চলিক ভাষায় যাকে বলা হয় ‘ফুরির বাড়ি ইফতারি’।
আঞ্চলিক সংস্কৃতি ধরে রাখতে রমজান এলেই সারা সিলেটের মতো সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরেও ধুম পড়ে যায় ফুরির বাড়ি ইফতারি পাঠানোর। তবে যুগ-যুগান্তরের এ সংস্কৃতি নিয়ে বর্তমানে রয়েছে পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা। সুশীল সমাজের প্রশ্ন, এ কি প্রথা, নাকি মেয়ের বাড়ির জন্য বোঝা?
প্রবীণদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অতিথি আপ্যায়নে সিলেটের মানুষের রয়েছে দারুণ খ্যাতি। তেমনি অতিথি হিসেবে কারও বাড়িতে যাওয়ার সময় নানা ধরনের মৌসুমি ফল-ফলাদি, মিষ্টি-মিঠাই বা পছন্দমতো যেকোনো জিনিস সঙ্গে করে নেওয়ার প্রচলনও এখানে অনেক পুরোনো। বিশেষ করে সিলেটের আঞ্চলিক নিয়ম অনুযায়ী, রমজান মাসে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে ইফতারি নিয়ে যাওয়ার প্রথা দীর্ঘদিনের।
তবে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সিলেট অঞ্চল থেকে ফুরির বাড়ির ইফতারি দেওয়ার রেওয়াজে পরিবর্তন এসেছে অনেকটাই।
নারিকেলতলা গ্রামের প্রবীণ সালিসি ব্যক্তি আতিকউল্লাহ বলেন, ‘এটি আমাদের একটি সংস্কৃতি। বহু বছর ধরে চলছে। অনেক পরিবারই আনন্দের সঙ্গে এটি করে থাকে। তবে জুলুম করে নয়, যাঁর যাঁর সামর্থ্যানুযায়ী করা ভালো।’
জগন্নাথপুর উপজেলা নাগরিক ফোরামের জ্যেষ্ঠ সদস্য আলী আহমদ বলেন, বর্তমান বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম, এতে ফুরির বাড়ি ইফতারি পাঠানো খুবই ব্যয়বহুল। ধনীরা দিতে পারেন। তাঁদের তো টাকার অভাব নেই, কিন্তু দরিদ্র পরিবারগুলোর পক্ষে এটি সম্ভব নয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিজ ইচ্ছায় কেউই ফুরির বাড়ি ইফতারি পাঠান না! মেয়ের সম্মান রাখতে বা নির্যাতন থেকে বাঁচাতে এ ইফতারি পাঠানো হয়ে থাকে।
জগন্নাথপুরের ইকড়ছই জামেয়া ইসলামিয়া হাফিজিয়া সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক সাইফুল ইসলাম রিপন বলেন, এটি এখন প্রথার চেয়ে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান আধুনিক যুগে এ প্রথা বন্ধ করা হোক।’