উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় আকস্মিক সৃষ্ট বন্যায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঢলে তলিয়ে গেছে এই তিন উপজেলার প্রায় ১০ হাজার বিঘা বোরো ধানের জমি। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট। অনেক বাসাবাড়িতেও ঢুকে পড়েছে পানি।
গতকাল সোমবার সকাল থেকেই ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে ঢল নামতে শুরু করে। দুপুরের দিকে তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই কোনো কোনো জায়গায় নিচের দিকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে কোনো কোনো জায়গায় পানি এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৭ হাজার ৮৭৪ বিঘা, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার ৫০০ বিঘা ও জৈন্তাপুর উপজেলায় ৯০০ বিঘা বোরো ধানের জমি তলিয়ে গেছে।
গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর
গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাটে বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে তলিয়ে গেছে কৃষকের সহস্রাধিক হেক্টর জমির বোরো ধান। তবে, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে ফসলি জমি নিমজ্জিত হওয়ার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে গতকালের চেয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই কিছু জায়গায় নিচের দিকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে।
অপরদিকে কিছু এলাকার রাস্তাঘাট ভেঙে এবং তলিয়ে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি মানুষের বসতবাড়িসহ কয়েকটি হাটবাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। এতে মানুষের এক ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অনেক জায়গার রাস্তাঘাটে পানি কমলেও কাদা মিশে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। পিয়াইন নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জিরোপয়েন্টের কয়েকটি দোকান ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এতে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে ব্যবসায়ীদের।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী রাসেল আহমদ বলেন, ‘হঠাৎ পাহাড়ি ঢলের খবর পেয়ে তড়িঘড়ি করে গিয়ে দেখি দোকানের মালপত্র কিছুই নেই। সব পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেছে। আমার দোকানের প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকার মালামাল ভেসে নিয়ে গেছে।’
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রায়হান পারভেজ রনি বলেন, পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দেওয়ায় উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে এ পর্যন্ত প্রায় হাজার হেক্টরের মতো বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। হাওরগুলো পরিদর্শন করছি। পরিদর্শন শেষে ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। তবে দু-এক দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ফসলের তেমন একটা ক্ষয়ক্ষতি হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
কোম্পানীগঞ্জ
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি হাওরের নিচু জমির প্রায় ১৫০০ বিঘা বোরো ফসল উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। গত রোববার রাত থেকে সোমবার সন্ধ্যা সময়ের মাঝে এসব জমি তলিয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ রনিখাই ইউনিয়নের ফুকছা হাওর, ভাই কুড়ি, মটরের কুড়ি, দেওয়ার কর, কাপনা কুড়ি, ডাইলা হাওর, আখাই কুড়ি, কাংলাঘাটি ও দরম হাওর মিলিয়ে প্রায় ৪০০ বিঘা জমি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ফসল রক্ষা বাঁধের বাইরে আবাদ করা ওই সব জমির ফসল ছিল দুধ ও দানা পর্যায়ে।
উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর আলম জানান, পাহাড়ি ঢলের শঙ্কা ছিল। তাই এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে রাউটি হাওরে বাঁধ তৈরি করি। তবুও পানি আটকানো যায়নি। প্রবল স্রোতে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি প্রবেশ করে বোরো ফসল তলিয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রায়হান পারভেজ রনি (অ. দা) বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে প্রায় ১৫০০ বিঘা জমির ফসল। তবে পানি আর না বাড়লে ডুবে যাওয়া ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না। এ বছর উপজেলায় ৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।