সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (শাকসু) নির্বাচন ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে আয়োজন এবং শীতকালীন ছুটি পেছানোর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার দুপুরে তাঁরা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়ক ঘুরে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সমাবেশ করেন।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী মত দিয়েছেন, ১০ ডিসেম্বরের মধ্যেই শাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি গোষ্ঠীর অ্যাজেন্ডা (কর্মসূচি) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শীতকালীন ছুটি পিছিয়ে ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে; যা নির্বাচনের জন্য অনুকূল নয়।
নির্বাচন এগিয়ে আনার কারণ ব্যাখ্যা করে শিক্ষার্থীরা বলেন, ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর সাপ্তাহিক ছুটি, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের ছুটি। এই পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাবে। দীর্ঘ বছর পর শাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, শীতকালীন ছুটি নিয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আলাদা পরিকল্পনা থাকে। সারা বছর অন্যান্য ছুটিতে অনেকেই টিউশনির কারণে বাড়িতে যেতে পারেন না। তাই এই ছুটি পেছানো শিক্ষার্থীদের প্রতি অন্যায় আচরণ ছাড়া কিছু নয়।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, শাকসুর সংবিধানে ১৩ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা। কিন্তু একটি পক্ষকে সন্তুষ্ট করতে সংবিধান সংশোধন করে কমিশনকে ১৫ সদস্যে উন্নীত করা হয়েছে। এটি নির্বাচন বানচালের প্রথম ষড়যন্ত্র। পরে দেখা গেল, চারজন কমিশনার পদত্যাগ করেছেন, আবার তাঁদের অন্তর্ভুক্তও করা হয়েছে। নির্বাচনের আগে আবারও তাঁরা পদত্যাগ করবেন না, এ বিশ্বাসের ভিত্তি কোথায়?
শাবি শিক্ষার্থী ফয়সাল হোসাইন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একটি নকশা এঁকেছে। সেই নকশায় তারা ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন ঠিক করেছে। যেদিন কোনো শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে থাকবে না, সেদিন তারা জীবজন্তু দিয়ে ভুতুড়ে নির্বাচন দেবে। এই ভুতুড়ে নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থী ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।’
ফয়সাল হোসাইন আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে বলে দিতে চাই, আপনারা শাকসুর নির্বাচন দিতে দায়িত্বে আসেননি। আপনারা এসেছেন ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবে, তাদের চাটুকারিতা করে কীভাবে বড় বড় পদ নেওয়া যায়, সে জন্য। যদি শিক্ষার্থীদের শাকসুর নির্বাচন দিতে দায়িত্বে আসতেন, তাহলে একবার চারজন পদত্যাগের নাটক করতেন না। আরেকবার ১৭ ডিসেম্বর ক্যাম্পাসে নির্বাচনের তারিখ ঠিক করতেন না।’
শাবি শিক্ষার্থী ফয়সাল আরও বলেন, ‘কমিশন বলছে, ভোটার তালিকা প্রস্তুত। অথচ তফসিলে ভোটার তালিকা প্রকাশের জন্য চার দিন সময় রাখা হয়েছে এবং নির্বাচনের আগে ১৫ দিন ফাঁকা রাখা হয়েছে। এসব নাটক কি শিক্ষার্থীরা বোঝেন না? নাটকের পর নাটক করে বলছে, ১০ ডিসেম্বর নির্বাচন নিতে প্রস্তুত নয়। একেক নাটক করে শাকসু নির্বাচন বানচাল করে একটা দলকে খুশি করতে আপনারা যে নীলনকশা করেছেন, এ জন্য শুধু শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা নয়, জাতি আপনাদের ঘৃণার সঙ্গে মনে রাখবে। তাই আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
এর আগে দীর্ঘ ২৮ বছর পর গতকাল রোববার শাকসু এবং হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। শাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. আবুল মুকিত মোহাম্মদ মোকাদ্দেছ সংবাদ সম্মেলনে তফসিল ঘোষণা করেন।
তফসিল অনুযায়ী, ২০ নভেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ২২ নভেম্বর বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত খসড়া ভোটার তালিকা নিয়ে আপত্তি গ্রহণ করা হবে এবং চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৩ নভেম্বর। ২৪ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে। ২৫ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমাদান কার্যক্রম চলবে। মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ তারিখ ২৬ নভেম্বর বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। ২৭ নভেম্বর যাচাই-বাছাই শেষে ২৮ নভেম্বর প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। ৩০ নভেম্বর বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রার্থিতার বিষয়ে আপিল ও নিষ্পত্তি চলবে ১ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ২ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। ১৭ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর টানা পাঁচ বছর শাকসুর নিয়মিত কার্যক্রম ও নির্বাচন সম্পন্ন হয়। ১৯৯৭ সালের নির্বাচনের পর কেটে গেছে ২৮ বছর।