সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা শহর থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরে ছোট্ট একটি রেলস্টেশন সলপ। স্টেশন চত্বরে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাঁচটি ঘোল-মাঠার দোকান, বিপরীত দিকে রয়েছে আরও ছয়টি। এই ছোট্ট পরিসর থেকেই প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে খাঁটি দুধে তৈরি ঘোল ও মাঠা।
ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট কিংবা ফেনীসহ সলপের মাঠা-ঘোলের চাহিদা সারা দেশেই বাড়ছে। সলপের ঘোল-মাঠার দোকানে হচ্ছে তরুণদের কর্মসংস্থানও।
সলপ স্টেশনের পাশে ছাদেক ঘোল-মাঠার দোকানে কথা হয় মো. আব্দুল মালেক খানের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, এই ব্যবসার সূচনা তাঁর দাদা ছাদেক আলীর হাতে, সেই ১৯২২ সালে। রাজশাহীর এক হিন্দু ঘোষ পরিবারের কাছ থেকে ঘোল-মাঠা বানানোর কৌশল শিখে এসে সলপে বিক্রি শুরু করেছিলেন তিনি। তখন মাটির পাতিলে হতো পরিবেশন, আর সেই ঘোল ছিল জমিদারদের পছন্দের পানীয়, যা পাঠানো হতো ভারতেও।
শতবর্ষের সুনাম ধরে রাখার কথা জানিয়ে মালেক খান বলেন, ‘আমার দাদার মতো আমরাও এখনো খাঁটি দুধেই ঘোল-মাঠা বানাই। এক ফোঁটা পানিও মেশানো হয় না। তিনি জানান, প্রতিদিন দোকানে প্রায় ৫০ মণ দুধ জ্বাল দিয়ে বানানো হয় মাঠা ও ঘোল। শুধু তাঁর দোকান থেকেই প্রতিদিন বিক্রি হয় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার ঘোল-মাঠা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সলপ স্টেশনের আশপাশের ১০-১১টি দোকানে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২২০ মণ দুধ ব্যবহার করে তৈরি হয় ঘোল ও মাঠা, যার বাজারমূল্য দিনে প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা। এসব দোকানে সরাসরি কাজ করেন প্রায় ১০০ শ্রমিক। প্রতিটি দোকানে শ্রমিকদের মাসিক ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়, সঙ্গে খাবারও। আল-আমিন নামে এক কর্মী বলেন, মালিক আমাদের খাওয়া-দাওয়া ও বেতন ঠিকঠাক দেন। এখান থেকে আমরা প্রতিদিনই দেশের নানা জেলায় ঘোল পাঠাই।
ঘোল-মাঠা বানানোর কাজটি ধরে রাখতে চান মালেক খানের মতো ব্যবসায়ীরা। তবে এর চ্যালেঞ্জও কম নয়। খাঁটি দুধের অভাব এখন ঘোল-মাঠা বানানোর প্রধান বাধা। মালেক খান বলেন, ভালো দুধ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই আমরা নিজেরাই গরু পালনে আগ্রহী। এ জন্য দরকার সরকারিভাবে কোটি টাকার ঋণ ও সহায়তা। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থেকে ঘোল খেতে এসেছেন সোহাগ। তিনি বললেন, সলপের ঘোলের মতো স্বাদ আর কোথাও পাই না।